ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ চৈত্র ১৪৩১, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হচ্ছেন এনসিপি নেতারা, কেউ কেউ চাপে

ফাহিম হোসেন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫
নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হচ্ছেন এনসিপি নেতারা, কেউ কেউ চাপে

ঢাকা: নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। উপস্থিতি জানান দিতে অনেকেই করেছেন আড়ম্বর শো-ডাউন।

ইফতার আয়োজন, গ্রামে ছোট জনসংযোগ করে তারা মানুষের কাছাকাছি যাচ্ছেন।

এসব কার্যক্রম চালাতে গিয়ে চাপেও পড়ছেন কেউ কেউ। নোয়াখালীর হাতিয়ায় জনসংযোগের সময় হামলার শিকার হন জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদসহ তার নেতাকর্মীরা। মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীকে  চাঁদপুরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

তবে এসব চাপ মোকাবিলা করে ঈদের পর আরও জোরেশোরে তৃণমূলে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিপির। দলটি বলছে, বিএনপি, জামায়াত বা অন্য কোনো দলের তৃণমূলের নেতারা যদি পেশিশক্তি প্রদর্শন করে ভয় দেখিয়ে পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি বজায় রাখতে চায়, তাহলে সংগঠিত হয়ে তারা এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন।

দলটি বলছে, ঈদ উপলক্ষে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন। এই সুযোগে তারা স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ যারা নতুন দলে যোগ দিতে চায়, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেও তারা বসছেন।

রংপুর-৪ আসনে নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নির্বাচন করতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার দুই শতাধিক ভ্যান নিয়ে তিনি এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এরপর এই আসনের অধীন নিজ গ্রাম টেপামমধুপুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইফতার করেছেন।

কুমিল্লার দেবীদ্বারে কয়েকদিন ধরেই সক্রিয় দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি কুমিল্লা-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

গত সোমবার উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম শতাধিক গাড়ির শো-ডাউন করে নিজ এলাকা পঞ্চগড়ে ফিরেছেন। তিনি অটোয়া উপজেলায় বিভিন্ন বাজারে, পথেঘাটে ঘুরে তিনি মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন। রাণীগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। পঞ্চগড়-১ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।

মঙ্গলবার হাজীগঞ্জে ফিরেছেন দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। হাজীগঞ্জের শাহারাস্তি আসনে তিনি নির্বাচন করতে পারেন। তবে এই উপজেলায় ইফতার করতে গিয়ে প্রথমদিনই তিনি হুমকির মুখে পড়েন। ছাত্রদলের নেতারা তাকে উপজেলায় প্রবেশ করতে দেবেন না বলে ফেসবুকে হুমকি দেন।

দলটির সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তিনি হাতিয়া দ্বীপে ফেরিঘাট চালু, ভূমিহীনদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া, নদীভাঙন নিয়ে গ্রামে গ্রামে গণশুনানি কর্মসূচি করেছেন।

গত সোমবার মাসউদ ও তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়। বিএনপির একদল নেতাকর্মী তার ওপর হামলা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে এখনো নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় দেখা যায়নি। সূত্র বলছে তিনি ঢাকা-১১ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। দলের আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ আসনে নির্বাচন করতে পারেন। তবে তাকেও এখনো আসনকেন্দ্রীক সক্রিয় হতে দেখা যায়নি।  

শনিবার (২৯ মার্চ) এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক সামান্থা শারমিন ভোলা যাচ্ছেন। দুপুর থেকে নাগরিক পার্টির পথসভা, ইফতার মাহফিল ও জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের ঈদ উপহার বিতরণের একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। তিনি ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হোসাইন মোহাম্মদপুর এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। তিনি এলাকায় খাল ও মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন করেছেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে মিছিল করেছেন। জেনেভা ক্যাম্পের ড্রিম এনএলজে হাইস্কুলে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ সৈকতের নামে একটি কম্পিউটার ল্যাব উদ্বোধন করেছেন। ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘদিন থেকেই সক্রিয়। তিনি রোজায় ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে ইফতার করেছেন। এহাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।

নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলম লক্ষ্মীপুর এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে ইফতার মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মাঠে দৃশ্যমান হচ্ছেন। দলের আরেক যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এলাকায় সক্রিয় হচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি সিরাজগঞ্জ এলাকায় বিশাল শো-ডাউন দিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় তিনি আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি এই এলাকায় নির্বাচন করতে পারেন।

চট্টগ্রামের বাশখালীতে সক্রিয় হচ্ছেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক। কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর এলাকা থেকে নির্বাচন করতে পারেন যুগ্ম সদস্য সচিব নুসরাত তাবাসসুম। একাধিকবার তিনি এই আসন থেকে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিজিওনাল ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে শ্রীলংকা রয়েছেন।    

দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ কুড়িগ্রামে উলিপুর, বাজারহাট এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি একাধিক উঠান বৈঠক করেছেন। তিনি কুড়িগ্রাম-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। টাঙ্গাইলের মধুপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন দলের উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলিক মৃ। আগে থেকেই তিনি মধুপুরে নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন। গত ১০ মার্চ তিনি মধুপুর এলাকায় শো-ডাউন করেন।

উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাসের খান গাজীপুরে সক্রিয়। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার নরসিংদী-২ আসেন সক্রিয় হচ্ছেন। পলাশ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিনি ইতোমধ্যে জনসংযোগ ও ইফতার আয়োজন করেছেন।  

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সক্রিয় হচ্ছেন নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী। তিনি বাংলাদেশে রাজনীতিতে আলোচিত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নাতি। ফজলুল হক আমিনী এর আগে এ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ঝালকাঠি-১ আসন থেকে দলের যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান তুহিন সক্রিয় হচ্ছেন। তিনি এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন।

দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। তিনি এই এলাকায় সক্রিয় হচ্ছেন। এছাড়া দলের দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব এহতেশামুল হক সিলেট এলাকায় কয়েকদিন ধরেই সক্রিয় হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ মৌলভীবাজার এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, যেহেতু ঈদ কেন্দ্রিক সবাই নিজ নিজ জেলায় যাবেন, সেহেতু ওখানকার যারা সংগঠক আছেন, যারা নাগরিক পার্টিতে আসতে চায় এবং স্থানীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে আমাদের দুইশতাধিক ইফতার আয়োজন হয়েছে। তবে এটা একেবারেই নির্বাচনকেন্দ্রীক না।

তিনি বলেন, আমরা শুরুতে সংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকে নজর দিচ্ছি। তারপর নির্বাচন নিয়ে ভাববো। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রিক সংস্কারের কিছু সুপারিশ আছে। সেগুলোরও অগ্রগতি হতে হবে। নাহয় শেখ হাসিনার যেই পুরনো রেখে যাওয়া নির্বাচন কমিশন, তা ধরে এগিয়ে গেলে তো লাভ নেই।  

বিভিন্ন স্থানে বাধার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ওপেন সিক্রেট। আগস্টের পরে বিএনপি অনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করতে হয়েছে। তাও তাদের থামছে না। তৃণমূলের কিছু জায়গায় আমাদের জন্য চাপ আছে, তবে সব জায়গায় না। বিএনপির তৃণমূল নেতারা যদি মনে করে, পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি বা পেশিশক্তি প্রদর্শন করে ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করবে, তবে যারা নতুন রাজনীতি করতে চায়, তারা সংগঠিত হয়ে এর প্রতিবাদ জানাবে। বর্তমানে একটি নিরপেক্ষ সরকার ক্ষয়তায় রয়েছে। এই সরকারের অধীনে সবার রাজনীতি করার সমান সুযোগ রয়েছে। আমরা আশা করব, সবাই রাজনীতি করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫
এফএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।