ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৬ মে ২০২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪৬

রাজনীতি

৩ মাস যে বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন মমতাজ, মধ্যরাতে আসেন ঢাকায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৫, মে ১৬, ২০২৫
৩ মাস যে বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন মমতাজ, মধ্যরাতে আসেন ঢাকায়

মানিকগঞ্জ: ৫ আগস্টে হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গা-ঢাকা দিতে শুরু করেন। দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

তাদের মতো গা-ঢাকা দিয়েছিলেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য (এমপি) কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমও। তবে দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি।  

গত ১৩ মে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর জানা গেল, গত ৯ মাস ধরে দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন মমতাজ। এর মধ্যে টানা ৩ মাস মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ভাইয়ের বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। এই ৩ মাসে একদিনও তিনি ওই বাড়ির বাইরে বের হননি নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদী দলের এই সাবেক এমপি।  

মমতাজের আপন ভাই এবারত হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। একই তথ্য দিয়েছেন মমতাজের তৃতীয় স্বামী ডা. এসএম মঈন হাসান।  

এবারত হোসেন জানান, শিল্পী (মমতাজ) আপা ৫ আগস্টের পরের দিন থেকে টানা ৩ মাস সিংগাইরের চর দুর্গাপুরে আমার বাড়িতেই আত্মগোপন করে ছিলেন। আমার স্ত্রী, সন্তান ছাড়া পাশের বাড়ির কেউই জানতে পারেনি যে সাবেক এমপি মমতাজ আমার বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। ওই সময় আপা দলের নেতাকর্মীসহ সব শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে মোবাইলফোনেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কেউ প্রয়োজন হলে আমার মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন।

তাহলে মমতাজ বেগমকে ঢাকা থেকে কীভাবে গ্রেপ্তার করা হলো প্রশ্নে এবারত হোসেন বলেন, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিপার মাধ্যমে শিল্পী (মমতাজ) আপা ঢাকায় আসেন। নিপার নামেই ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। কোনো এক মধ্যরাতে গ্রামের বাড়ি থেকে বোরকা পরে বের হন তিনি। মাইক্রোবাসে সরাসরি ধানমন্ডির ভাড়া বাসায় ওঠেন। গাড়ির কাচ কালো রঙের ছিল, তাই ভেতরের যাত্রীকে দেখা যায়নি।  

এবারত আরও জানান, নিপার স্বামী প্রবাসে থাকেন। মমতাজ আপার সব ধরনের দেখভাল নিপা আপাই করতেন। আর টাকার জোগান দিয়ে আসতেন মমতাজের পিএস জুয়েল।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মমতাজের ভাই এবারতের বাড়িসহ আশপাশের এলাকা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাইরের কোনো আগন্তুক বাড়ির আঙিনায় ঢোকামাত্র তাদের বাড়িতে কেউ নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হতো।  

এভাবেই সিংগাইরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়িয়ে মমতাজ বেশ আয়েশিভাবে ভাইয়ের বাড়িতে ৩ মাস কাটিয়েছেন।  

এদিকে মমতাজের তৃতীয় স্বামী ডা. মঈন হাসান চঞ্চল জানান, মমতাজ কিছুদিন সাবেক দ্বিতীয় স্বামী মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রমজান আলীর মেয়ে রুনুর মোহাম্মদপুরের বাসায় আশ্রয়ে ছিলেন। এরপর তিনি নিপার ভাড়া করা বাসায় থাকতে শুরু করেন।  

মমতাজের আত্মগোপনে থাকার প্রশ্নে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেওএম তৌফিক আজম জানান, তিনি এই থানায় ২ মাস হলো যোগদান করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে মিরপুর মডেল থানায় করা সাগর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাকে। চারদিন রিমান্ডে রয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে তার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।