ঢামেক থেকে: ২০ দলীয় জোটের অবরোধের মধ্যে যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তদের নারকীয় পেট্রোল বোমা হামলায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দগ্ধ হয়েছেন ২৯ জন সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে নয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার (২৩ জানুয়ারি) রাত সোয়া ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনে (ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৪৮৮৬) পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাসের কমপক্ষে ২৯ জন যাত্রী দগ্ধসহ মোট ৪৭ জন আহত হয়েছেন। দগ্ধরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এছাড়া আহতদের স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের সাবেক পরিচালক ডা. সামন্তলাল সেন ও প্রফেসর সাজ্জাদ খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তিনজন নারীসহ ২৯ জন দগ্ধ রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে নয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
ঢামেকে কয়েকজন দগ্ধ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গ্লোরি পরিবহনের বাসটি গুলিস্তান থেকে ডেমরা রোড দিয়ে নারায়গঞ্জের রূপগঞ্জে যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী কাঠেরপুল আসামাত্র রাস্তায় একটি ককটেল ফাটায়। এ সময় গাড়িটির গতি কমে যায়। তখন জানালা দিয়ে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এতে পুরো বাসে আগুন ধরে গেলে অধিকাংশ যাত্রীই দগ্ধ হন।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবণী শংকর জানিয়েছেন, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসটিতে যে স্থানে আগুন দিয়েছে তার দুই পাশে ডোবানালা ও ফাঁকা জায়গা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতর্কিত নারকীয় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
দগ্ধদের মধ্যে রয়েছেন, জয়নাল আবেদিন মোল্লা (৩০), ইশতিয়াক বাবর (২৫), সালাউদ্দিন পলাশ (৩৫), তাগবির ইসলাম (৩২) সালমান (২০), নাজমুল (২৭), মো. শরিফ (৪৮), উসমান গণি (২৮), ইয়াসিন আরাফাত (৪০) ও তার স্ত্রী শাহিদা (৩০), মোশারফ হোসেন (৪০) ও তার ভাতিজা সালাহউদ্দিন (৩০), হৃদয় (২০), রাশেদ (২০), মোমেন (২৫), খোকন (৩০), নুর আলম (৩০), হারিস (৩২), ফারুক হোসেন (২০), মো. সুমন (২৫), রুবেল (২২), আবুল হোসেন (৩৫), শাহজাহান সরদার (৬০), মোজাফ্ফর মোল্লা (৬০), শহিদুল ইসলাম (৪০) ও মো. জাবেদ (৩২)। এছাড়া আহত হয়েছেন আফরোজা (৩০)।
এদিকে যাত্রাবাড়ীর মেডি কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ১৪ জনকে, গ্লোব হাসপাতালে ছয়জনকে এবং অন্যান্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে আটজনকে। তাৎক্ষণিকভাবে সবার পরিচয় জানা যায়নি।
বাসটির যাত্রী জাতীয় বাস্কেটবল দলের সদস্য ও সিটি গ্রুপের কর্মকর্তা তাকদির ইসলাম সেতু জানান, গ্রামের বাড়ি যেতে তিনি গুলিস্তান থেকে বাসে উঠেছিলেন। বাসের বাম পাশে বসেছিলেন। মাতুয়াইল সড়কে কোনাপাড়াতে পৌঁছলে ডান পাশের জানালা দিয়ে একটি পেট্রোল ছোড়া হয় বাসের ভেতর। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বাসে আগুন ছড়িয়ে যায়। যাত্রীরা জানালার কাঁচ ভেঙে বের হন। এর আগে অধিকাংশ যাত্রী দগ্ধ হন।
দগ্ধ জয়নাল আবেদিন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমি নিউমার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করি। কাজ শেষে বাসে করে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের বাসায় যাচ্ছিলাম। কাঠেরপুল এলাকায় আসতেই হঠাৎ বাসের ভেতর কি যেনো ঢুকে পড়লো। তারপর পুরো বাসে ধাউ ধাউ করে আগুন। জানালা ভেঙ্গে আমি বের হয়েছি।
রূপগঞ্জ মুরাপারা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাজমুল (১৯) বাংলানিউজকে জানান, তিনি পরিবারের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়াতে বিয়ের দাওয়াতে যান। ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন।
নাজমুল বলেন, হঠাৎ আগুনের একটি বস্তু জানালা দিয়ে বাসের মধ্যে এসে পড়ে। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রাণ বাঁচাতে জানালা দিয়ে লাফ দেই।
আরেক যাত্রী মোশাররফ হোসেন (৩৬) জানান, তিনি বাসের ডান পাশে বসেছিলেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন কিশোর ও যুবক পেট্রোল বোমাটি ছুড়েই পালিয়ে যায়। আগুনের কারণে তাদের চেহারা দেখতে পারেননি তিনি।
অপর বাসযাত্রী আল-আমিন জানান, তিনি মেয়ে দেখার জন্য ডেমরায় যাচ্ছিলেন। সঙ্গে তার দুই খালুসহ পাঁচজন ছিলেন। তার দুই খালুই দগ্ধ হন। অপর তিনজন জানালা দিয়ে লাফ দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন।
যাত্রাবাড়ী ছাড়াও শুক্রবার রাজশাহীর পবা ও তানোরে বাসে পেট্রোল বোমায় আরও ১০ জন দগ্ধ হয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ১৮তম দিনে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে কমপক্ষে ৪০ জন দগ্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৫/আপডেটেড : ০৪৩৯ ঘণ্টা
** আমরা কেন অবরোধের বলির পাঠা?
** যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন, দগ্ধ ১৪
** রাবি’র সামনে ট্রাক লক্ষ্য করে ককটেল
** বরিশালে ট্রাকে আগুন, আহত ২
** চাটখিলে ট্রাকে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ ২
** রাজশাহীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
** আজিমপুরে যাত্রীবেশে বাসে আগুন
** ৯ যাত্রী দগ্ধ, ২ শিবিরকর্মীকে গণধোলাই