ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে তাবিজ বানাতে নয়, জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তারা অস্ত্র গলায় ঝুলিয়ে কী করবে! জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলেই তারা গুলি চালাবে নাকি অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখবে?
রোববার দুপুরে (০১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোট আয়োজিত ‘জঙ্গিবাদ রাজনীতি: মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, আইনের ভাষায় যারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেবে, তারাই তো গুলি চালাবে। এতে বলে নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে!
তিনি বলেন, তাহলে কী করবো! সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবো না? সন্ত্রাসীদের তামাশা দেখবো? সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করলে গুলি চালাবে, এটা তো আইনের কথা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, মানুষকেও তো ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় গুলি চালাতে অস্ত্রের লাইন্সেস দেওয়া হয়েছে। আমাকে যদি কেউ হত্যা করতে আসে, তাহলে আমি কি অস্ত্রে চুমো খাবো নাকি আঙুল চুষবো?
মানুষের জানমাল রক্ষা, নিরাপত্তা ও ধ্বংসাত্মক কাজ বন্ধ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা যা করার দরকার তা তা করতে সরকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
‘আওয়ামী লীগের লোক পেট্রোল বোমা মারে’ বিএনপির এ দাবির বিরোধিতা করে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, বিএনপির দাবিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার পর দিনই বিএনপি বলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
বোমাসহ যারা ধরা পড়ছে, বিএনপি মুখে তাদের লোক না বললেও কাজে প্রমাণ হচ্ছে তারা বিএনপির লোক।
বিএনপি পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মেরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বোমায় পোড়াদের কষ্টে আল্লাহর আরশ কাঁদে উল্লেখ করে বিএনপি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, আপনার ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে এত কষ্ট! কিন্তু যাদেরকে হত্যা করিয়েছেন, পুড়িয়ে মেরেছেন, তাদের চিৎকার-কষ্টে আল্লাহর আরশ কাঁদে সেটা কি আপনি (খালেদা) বুঝতে পারছেন?
তিনি বলেন, আপনার কুলাঙ্গার ছেলে, মাদকাসক্ত, আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় টাকা ফেরত আনা হয়েছে, সেই ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যুতে আপনাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে।
ডাক্তার আইতেও দেখলাম না, যাইতে দেখলাম না। শুধু শিমুল বিশ্বাসকে আইতে-যাইতে দেখলাম। কী ইনজেকশন, একটু আগে নির্দেশ দেয়, হরতাল-অবরোধ চলবে।
এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে সরকার করুণ আবেদন জানালেও খালেদা জিয়ার কর্ণকুহরে যায়নি বলে অভিযোগ করেন মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ১৬ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ থেকে ৪ লাখ তো তাদের (বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীদের) ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাদের জীবনের দিকেও তো আপনি তাকালেন না।
পরীক্ষা বন্ধে করে আপনি (খালেদা) জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছেন। পরীক্ষার্থীরা আকুল আবেদন করে বলেছেন, যে ক’দিন পরীক্ষা, সে ক’দিন হরতাল বন্ধ রাখার। ১৬ লাখ পরীক্ষার্থী, ১৬ কোটি মানুষের আর্তনাদ খালেদার কানে পৌঁছায় না বলে অভিযোগ করেন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।
ড. কামালকে খালেদার প্রতি সহানুভূতি নয়, বার্ন ইউনিটে গিয়ে সহানুভূতি জানানোর অনুরোধ করে মোজাম্মেল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে শোক জানাতে পারেন, বার্ন ইউনিটে গিয়ে শোক জানানো প্রয়োজন মনে করেননি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেবে। দেশ রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধাদের ’৭১-এর মতো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধ মহাজোট চেয়ারম্যান মো. মনিরুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সংগঠনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন (অব.) শচীন কর্মকার, সহসভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫