নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে অবরোধে বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দেওয়াসহ নাশকতার কাজের পেছনে রয়েছেন যুবদল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা।
ওইসব নেতারা আত্মগোপনে থেকে অনুগামী কয়েকজন লোকজনদের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের সিরাজউদ্দৌলা সড়কে বন্ধু পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময়ে জনতার হাতে আটক শফিকুল ইসলাম ও পরে তার স্বীকারোক্তিতে আটক শামীম মিয়া পুলিশের কাছে এসব তথ্য দেন।
আটক ২ জন শনিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় শফিকুল ও শামীম। এ দুইজনের মধ্যে শফিকুল শহরের মাসদাইর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের শ্রমিক। আর শামীম ওই এলাকাতে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজের মিস্ত্রী।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল ও শামীম জানান, মাসদাইর এলাকার মহানগর ছাত্রদলের একজন শীর্ষ নেতার (পুলিশের তদন্তের জন্য নাম প্রকাশ করা হয়নি) টাকার বিনিময়ে দুইজন মোটরসাইকেলে করে বাসে আগুন দিতে এসেছিলেন। এ দুইজনকে ১ হাজার টাকায় চুক্তি করে ওই ছাত্রদল নেতা। এজন্য এ দুইজনকে অগ্রিম ২শ টাকা দেওয়া হয়। বাকী টাকা বাসে আগুন দেওয়ার পরে দেওয়ার কথাও বলেন ওই নেতা। চুক্তি মোতাবেক শামীমের মোটরসাইকেলে করে শফিকুলকে নিয়ে আসে। শফিকুল বাসে আগুন দেওয়ার সময়ে জনতার হাতে আটক হওয়ায় দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে শামীম। পরে রাতে শফিকুলের দেওয়া তথ্য মতে শামীমকে সদর মডেল থানা পুলিশ আটক করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ দুইজন আরো জানান, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মোটরসাইকেল ও হোটেল রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের টাকার প্রলোভন দিয়ে এসব নাশকতা করাচ্ছে। মোটরসাইকেলের গ্যারেজ থাকা বিভিন্ন মোটরবাইক হতে অকটেন নিয়ে নাশকতাগুলো করাচ্ছে।
নাশকতার পেছনে মহানগর যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা, জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক সহ আরো কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের নেতা এসব নাশকতার জন্য নিয়মিত টাকাও ছড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে ওইসব নেতাদের নাম ও পরিচয় পুলিশ জানতে পেরেছে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, গ্রেফতারকৃতরা আদালতে বাসে আগুন দেওয়ার নির্দেশদাতা ও জড়িতদের নাম প্রকাশ করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এদিকে আদালতের একটি সূত্র জানায়, কালিরবাজারে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় যাদের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয়েছে গ্রেফতারকৃতরা আদালতে তাদের নামই বলেছে। আদালতকে তারা জানিয়েছে ছাত্রদলের কতিপয় নেতার সঙ্গে আর্থিক চুক্তির মাধ্যমে তারা বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ওই ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সদর মডেল থানার এসআই মো. আবিদ হোসেন খান বাদী হয়ে ছাত্রদলের ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাত ৬/৭ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামিরা হল বাসে আগুন দেওয়ার সময় গ্রেফতারকৃত শফিকুল ইসলাম, শামীম, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক রশিদুর রহমান রশো ও শাহেদ, রিয়াদ, লিটন, বকুল, রুহুল, জনি, সজল, ফারুক, রাজু।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫