ঢাকা: আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু সব ত্যাগ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী সংগঠন ছিলো বলেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পেরেছিলেন।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শক্তিশালী সংগঠন ও জনগণকে সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা এনেছিলেন। আওয়ামী লীগ যেমন স্বাধীনতা এনেছে, তেমনি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ’
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বড় বড় অর্জন আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই এসেছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের সরকারের মেয়াদ আরও তিন বছর ছয় মাস আছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে ১৪ শতাংশে আনতে চাই।
‘সেটা না পারলে ১৬ শতাংশে নামিয়ে আনবো। সে অনুয়ায়ীই বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে,’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেই ত্যাগই করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানাই। আমি জনগণকে অভিনন্দন জানাই তারা আমাদের পাশে থেকেছেন।
‘দেশে ফিরে আমি প্রায় প্রতিটি জায়গায় গিয়ে শুনেছি এখানে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দেবেন, এই অভিপ্রায় থেকেই তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন। গিয়েছেন গ্রামে গ্রামে। ’

তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা পেশ করলেন বঙ্গবন্ধু। এরপর ঘরে বসে থাকেননি তিনি। সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। ’
‘তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে রাখা হয়। গ্রেফতারের পর ৬ মাস আমরা জানতামই না তিনি কোথায় আছেন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলেছে। এর পর ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান তিনি মুক্তি পেলেন। আর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন, আওয়ামী লীগকেও প্রস্তুত রেখেছেন। ’
‘একটি মানুষ সংগঠনের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করতে পারে সেটা ভাবাই যায় না। বঙ্গবন্ধুর বাবা তাকে বলেছিলেন তিনি চাইলে বিলেতে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারবেন। কিন্তু তিনি যাননি। ১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু প্রদেশিক সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, সত্তরের নির্বাচনের আগেই বঙ্গবন্ধু লন্ডনে বসে মুক্তিযুদ্ধের সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে কিন্তু ক্ষমতা দেবে না পকিস্তানি শাসকরা।
‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) দেশের মানুষকে সংগঠিত করার পাশাপাশি বিদেশেও জনমত গড়ে তোলেন। প্রবাসীদের সহায়তায় লন্ডনে বসেই সশস্ত্র যুদ্ধের সব কৌশল ও পরিকল্পনা করেন। সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন,’ যোগ করেন তিনি।
৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশনা দিতেন সে অনুযায়ীই বাংলাদেশ চলতো এবং মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো বলেও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিদের্শ দিয়েছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে। মানুষও তার ডাকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, কিছু রাজাকার ও পাকিস্তানিদের পদালেহনকারী ছাড়া।
‘এমনকি তার নির্দেশ ছাড়া বাংলাদেশে আসা তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খানের জন্য খাবারও রান্না হয়নি,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ছাড়াও দেশের মানুষকে অধিকার আদায়ের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নিদের্শেই প্রত্যেক এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা হয়। মাইকিং করে, টেলিগ্রাম পাঠিয়ে কিংবা লিফলেট বিতরণ করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা প্রচার করা হয়। এতে বাঙালি জাতি সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়। আর তাতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পকিস্তানের অনুচররা।
‘২৫শে মার্চ কালো রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘদিন একটি সেলে বন্দি রেখে জুলুম অত্যাচার করা হয়েছে। তবে তিনি জানতেন এদেশ স্বাধীন হবে। তাই পাকিস্তানের জেলে বন্দি থেকেও বাংলার মানুষের মুক্তির জয়গান গেয়েছেন,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও জুলুম করা হয়েছে। এমনকি তাদের ছেলে-মেয়েদের ওপরও নির্যাতন করেছে পাকিস্তানিরা। কিন্তু তারা কখনও মাথা নত করে নাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল ছিল তারা।
‘এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর শক্তি। শক্তিশালী সংগঠন করেছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়েছে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এসকে/এমএ/এএ
** প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ করছেন শেখ হাসিনা