ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার ৭০তম জন্মদিন

৭০ পাউন্ডের ৩ কেকের অর্ডার কুপার্স-বেকার-সুইসে

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
৭০ পাউন্ডের ৩ কেকের অর্ডার কুপার্স-বেকার-সুইসে খালেদা জিয়া / ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজনৈতিক অঙ্গন ও নানা মহলের সমালোচনার মধ্যেই শনিবার (১৫ অগাস্ট) সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেক কেটে নিজের জন্মদিন উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার এই দিনে জন্মদিন উদযাপন না করতে তার প্রতি আহ্বান ছিল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের।



কিন্তু সব মহলের অনুরোধ, পরামর্শ ও ‘হুমকি’  উপেক্ষা করে ‘জাতীয় শোক দিবস’ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার দিনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে আনা কেক কেটে নিজের ৭০তম জন্মবার্ষিকী পালন করবেন খালেদা জিয়া।

তবে অন্য বছরগুলোতে ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ০১ মিনিট) কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করলেও এবার শুক্রবার পড়ে যাওয়া সেটি আর করছেন না খালেদা জিয়া। এবার কেক কাটবেন ১৫ আগস্টের শেষ প্রহরে।

বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে আসবেন খালেদা জিয়া। এর পর রাত ৮টার দিকে ঢাকা মহানগর বিএনপি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে আনা কেক কাটবেন তিনি। এছাড়াও দলের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলো তাদের মতো করে এ জন্মদিন উদযাপন করবেন।

এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং বিএনপিপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতরা উপস্থিত থাকবেন।

‘সুইস’-‘কুপারস’-‘মি. বেকার’ থেকে কেক!
এদিকে দলের চেয়ারপারসনের জন্মদিন উদযাপনের জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্র, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকার প্রসিদ্ধ কেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘সুইস’, ‘কুপারস’ ও ‘মি. বেকার’ থেকে ৭০ পাউন্ড ওজনের আলাদা আলাদা তিনটি কেকের অর্ডার দিয়েছে এ তিন অঙ্গ সংগঠন।

জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী যুবদল বেইলি রোডের ঐতিহ্যবাহী কেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘সুইস’ থেকে আনছে ৭০ পাউন্ড ওজনের কেক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে ম্যাডামের জন্মদিন উদযাপন করব আমরা। ইতোমধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ হয়েছে। বেইলি রোডের ‘সুইস’ আমাদের জন্য ৭০ পাউন্ড ওজনের কেক তৈরি করছে।

এদিকে সংগঠনের সভাপতি কারাগারে এবং সাধারণ সম্পাদক আত্মগোপনে থাকলেও খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপনে সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ সংগঠনও শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে কেক কেটে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন করবে। এরাও ৭০ পাউন্ড ওজনের কেক তৈরি করতে দিয়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ‘কুপারস’কে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারি বাংলানিউজকে বলেন, সভাপতি কারাগারে, সেক্রেটারি আছেন আত্মগোপনে। তারপরও ম্যাডামের জন্মদিন আমরা উদযাপন করব। শনিবার রাত ৮টায় গুলশান কার্যালয়ে কেক কেটে ম্যাডামকে শুভেচ্ছা জানাবো। আমাদের কেক প্রস্তুত করছে ‘কুপারস’, জানান তিনি।

এদিকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলও খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি হাবীব উন নবী খান সোহেল পর্দার অন্তরাল থেকেই সব ব্যবস্থা পাকা করছেন। শনিবার গুলশান কার্যালয়েও উপস্থিত থাকতে পারেন তিনি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭০ পাউন্ড ওজনের কেকটি তৈরি করছে ঢাকার আরেক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ‘মি. বেকার’।

বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। তবে তার জন্মদিন ও সাল নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী হলেও বাবার কর্মস্থল দিনাজপুরে জন্ম হয় খালেদার। তার মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার।

১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় খালেদা জিয়ার। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নানা পটপরিবর্তনে জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের দিকে চালিত করার যে চেষ্টা করা হয়, বিতর্কিত জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে কার্যত তা-ই উদযাপন করেন খালেদা।

১৯৮১ সালে ৩০ মে স্বামী জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন গৃহবধূ খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ৭ দলীয় জোটের নেত্রী হিসেবেও খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে’ জন্ম নেওয়া দল বিএনপির জনভিত্তি তৈরি করে দেন খালেদাই।

১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হলে ফের প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।

২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

গত বছর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারান খালেদা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
এজেড/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।