ঢাকা: কিছুদিন আগেও বাড্ডা থানা এলাকায় আধিপত্য ছিল যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বাউল সুমনের। কিন্তু হঠাৎ তার মৃত্যুর পর ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়েই প্রভাবশালী দু’গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুমনের মৃত্যুর পর এলাকার রাজনীতি-ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান গামা।
বিষয়টি নিয়ে সুমনের স্ত্রী ও তার অনুসারীদের সঙ্গে গামার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। আর এই দ্বন্দ্বের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। একই অভিযোগ তোলেন নিহতের পরিবারের সদস্যরাও।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বাংলানিউজকে বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল, ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ থেকে ৬ জন যুবক। মাহবুবুর রহমান গামাকে হত্যার টার্গেট ছিলো খুনিদের। তবে ঘটনাস্থলে তার সঙ্গে আরও কয়েকজন উপস্থিত থাকায় হত্যাকারীরা সবাইকে গুলি করে।
জলিল আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন বেশ ক’জনকে আমরা সন্দেহের তালিকায় রেখেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে পরিচয় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। শিগগিরি জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে বাড্ডা আদর্শনগর পানির পাম্পের কাছে আড্ডা দেওয়ার সময় হত্যার উদ্দেশ্যে চারজনকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শামসু মোল্লা ও উত্তর বাড্ডার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ফিরোজ আহমেদ মানিক রাতেই মারা যান।
আর শুক্রবার সকালে গুলশান ইউনাটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহবুবুর রহমান গামা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সদস্য সালাম গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ঘটনাস্থলের পাশের এক চা দোকানি বাংলানিউজকে বলেন, পাম্পের ভেতরে বসে তারা প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা দিতেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে চারজন ওই এলাকায় আসেন। রাত ৯টার দিকে ভেতরের গলি থেকে চারজন যুবক হেঁটে এসে তাদের পরপর পাঁচটি গুলি করে হোসাইন মার্কেটের পেছনের গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। ওই চার যুবক থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ও টি-শার্ট পড়ে ছিল।
এদিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন শামসু মোল্লার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি তার স্ত্রী শেফালী বেগম, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ওই এলাকার একটি টিনসেট বাসায় থাকতেন।
তার ছোট ভাই জাহিদ মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে, দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের একটি রিকশা গ্যারেজ ছিল। সেখান থেকে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলতো সংসার খরচ।
গামার মামাতো ভাই আমিনুর রহমান রিপন অভিযোগ করেন, আমার ভাই নোংরা রাজনীতির শিকার। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতির পাশাপাশি গামা সমাজ সেবামূলক অনেক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সোনার বাংলা সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি এনজিও চালাতের তিনি। তার বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী ও এক মেয়ে।
নিহত ফিরোজ রহমান মানিকের চাচাতো ভাই আক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমার ভাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, তিনি নির্মাণাধীন একটি বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার দিন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হওয়ার ওই পাম্পের ভেতরে চা খেতে দাঁড়ান। তখন দুর্বৃত্তরা এসে তাকেও হত্যা করে।
ডিএমপি গুলশান বিভাগের উপ- কমিশনার (ডিসি) মুস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, এটি একটি পূর্ব-পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর পেছনে রাজনৈতিক, নাকি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কেবল হত্যাকারীদের নয়, এই ঘটনার পেছনে যাদের ইন্ধন রয়েছে, তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
** বাড্ডায় সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ আরও একজনের মৃত্যু
** বাড্ডায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ২
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
এনএ/এজেডএস/এটি