ঢাকা: আগামী জাতীয় সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের (কেন্দ্রীয় কমিটি) সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। এ নিয়ে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
একই সঙ্গে আগামী সম্মেলনে দলের বিভিন্ন পদে নেতৃত্বেরও পরিবর্তন আসছে। বিশেষ করে সম্পাদকমণ্ডলীতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
আগামী দিনের জন্য দলের দক্ষ নেতৃত্ব বের করে আনতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিয়ে আসার চিন্তা করছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরুণদের তৈরি করতে দলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। এ কারণে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যাও বাড়তে পারে। এজন্য দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা হতে বলে জানান তারা।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ৭৩। যে সব পদের সংখ্যা বাড়তে পারে এরমধ্যে আছে- সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী সদস্য। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও বাড়োনো হতে পারে।
বর্তমানে দেশের ৭ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। আগামীতে ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই তিনটি নতুন বিভাগ হলে তিনটি সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাড়বে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক কয়েকজন নেতা জানান, বিগত দিনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন থেকে যেসব নেতা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং দলে ও দলের বাইরে পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে তাদের টানা হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
বিগত কয়েক বছরে অনেক তরুণ নেতৃত্ব বেরিয়ে এসেছেন যারা তাদের স্ব স্ব সংগঠনে ভালো করেছেন। নির্দিষ্ট কাজে দায়িত্ব না তারা থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলে মনে করেন দলের নীতি-নির্ধারকরা।
জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন,‘বাড়তে পারে। দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা বাড়নো হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও বাড়তে পারে। ’
এদিকে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়েই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ৩ বছর পরপর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ২৯ডিসেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিসেম্বরে বা সেটা সম্ভব না হলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সম্মেলন হবে।
যোগাযোগ করা হলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেয়াদ শেষে সম্মেলন যথা সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। সে প্রস্তুতি রেখেই এগোনো হচ্ছে। তবে এখন শোকের মাসের কর্মসূচি চলছে। ’
এদিকে দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সম্মেলনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের কিছু পদে যেমন পরিবর্তন আসছে, তেমনি অনেককে সরিয়েও দেওয়া হতে পারে।
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, দলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে না পারা, নিষ্ক্রিয় থাকা, বিগত সময় মন্ত্রিসভায় অনিয়মের অভিযোগ বা বিতর্কিত ভূমিকাসহ নানা অভিযোগে তাদের সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানান তারা।
দলীয় সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে বাদ পড়ার আশঙ্কায় থাকাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকীয় পদ ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে থাকা নেতারা আছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার বিগত মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন বলে দাবি করছে সূত্রগুলো।
এ তালিকায় আছেন মহাজোট সরকারে মন্ত্রিসভায় থাকা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুমণি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান প্রমুখ।
দলে তাদের কারও কারও অবস্থান বেশ ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে বলে দাবি করছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
এসকে/এমএ