ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জিয়া ট্রাস্ট মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ৩ সেপ্টেম্বর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
জিয়া ট্রাস্ট মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি ও জিয়া অরফানেজ ট্র্রাস্ট মামলার আরও ৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

 

রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার বিচার চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট’২০১৫) মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদকে জেরা শেষ করেন মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী টিএম আকবর।

এরপর মামলার রেকর্ডিং অফিসার মাহফুজুল হক ভুইয়া, সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষি ইনসান উদ্দিন আহমেদ ও ক্যাশ অফিসার শাহজাহান খান জবানবন্দি দেন।

ইনসান উদ্দিন মামলায় জবানবন্দি দেওয়ার সময় দুদকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর এটি আইন অনুযায়ী হচ্ছে না অভিযোগ করে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এজলাস ত্যাগ করেন।

পরে তিনি মিডিয়াতে বলেন, খালেদা জিয়ার বিচার আইন অনুযায়ী হচ্ছে না। দুদকের আইনজীবীরা তাকে শিখিয়ে দিচ্ছেন আর সাক্ষি শুধু মুখ দিয়ে উচ্চারণ করছে। বিচারকের কাছে বিষয়টির প্রতিকার চাইলে তিনিও আসামিপক্ষের কথা শুনছেন না। এমতাবস্থায় আমি এজলাস ত্যাগ করেছি।

তবে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব হোসেনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সাক্ষিকে শিখিয়ে দেওয়া হয়নি। তাকে সাক্ষি দিয়ে সহায়তা করাই প্রসিকিউটরের কাজ। তাই করা হয়েছে।

সাক্ষি মাহফুজুল হক দুদক এ মামলাটি দায়ের করার সময় তেজগাঁও থানায় কর্মরত ছিলেন। থানার অফিসার ইন চার্জের নির্দেশে তিনি এ মামলা রুজু করেন।

তাকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। সাক্ষি সিনিয়র অফিসার ইনসান উদ্দিন ও শাহজাহান খান জব্দ তালিকার সাক্ষি। দুদকের চাহিদা মতে এ মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র দুদক কার্যালয়ে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে হস্তান্তর করেন। তিনি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করলে তারা তাতে সই করেন।

জব্দ তালিকার সাক্ষি জবানবন্দি দেওয়ার পর খালেদার পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাক্ষিকে জেরা করার জন্য সময়ের আবেদন করেন। বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ৩ সেপ্টেম্বর বাকী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।

এর আগে দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদের জেরা শেষ হয়। এ নিয়ে চারজনের জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হলো। এদের মধ্যে ২ জনের জেরা শেষ হয়েছে।

আসামি মনিরুল ইসলাম খান আদালতের নির্দেশে তার পাসপোর্ট ও গ্রিন কার্ড আদালতে দাখিল করেন। বিচারক পাসপোর্ট ও গ্রিন কার্ড দাখিলের বিষয়টি রেকর্ড করে তা মনিরুল ইসলাম খানের জিম্মায় দেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।

অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠের অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫/আপডেটেড- ১৭৫৮ ঘণ্টা।
এমআই/এসএস/এনএস

** জিয়া ট্রাস্ট মামলায় আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ
** খালেদাকে ছাড়াই জিয়া ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।