ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কাজী জাফরের দাফন কুমিল্লার চিওড়ায় শনিবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
কাজী জাফরের দাফন কুমিল্লার চিওড়ায় শনিবার কাজী জাফর আহমেদ

ঢাকা: সদ্যপ্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের মরদেহ শনিবার (২৯ আগস্ট) বাদ জোহর তার জন্মস্থান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া কাজী বাড়িতে দাফন করা হবে।
 
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) রাত ৯টায় মরহুমের গুলশানের বাসভবনে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের ঘরোয়া বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।


 
এদিন রাত পৌনে ১০টায় কাজী জাফর আহমেদের ভাতিজা কাজী মোহম্মদ ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, ছোট মেয়ে কাজী রুনা অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার পর শনিবার বাদ জোহর চিওড়া কাজী বাড়িতে কাজী জাফরের মরদেহ দাফন করা হবে।
 
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় ইউনাইটেড হাসপাতালের মরচুয়ারি থেকে একটি ফ্রোজেন অ্যাম্বুলেন্সে করে গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৬৮ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তার মরদেহ।
 
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত গুলশান বাসভবনেই থাকবে প্রবীণ এই রাজনীতিকের মরদেহ। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হবে টঙ্গীর মিল গেটে। সকাল ৮টায় সেখানে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম নামাজে জানাজা।
 
সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা। বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে মরুহুমের তৃতীয় নামাজে জানাজা। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হবে কুমিল্লায়।
 
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন কাজী জাফর আহমেদ। সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কাজী জাফর আহমেদের মৃত্যুর খবর শুনে সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, জাতীয় পার্টির (একাংশ) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান সাইয়েদুল হাসান ইকবাল, বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা শ্রদ্ধা জানাতে হাসপাতালে যান।
 
কাজী জাফর আহমেদের দাফন কোথায় হবে, তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত না হলেও জানাজার স্থান ও সময় চূড়ান্ত করেছেন মরহুমের পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
 
আজন্ম সংগ্রামী এক সময়ের শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমেদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার সকাল ৮টায় টঙ্গীর মিলগেটে। দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ১১টায় এবং তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদে।
 
এরপরে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে জন্মস্থান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া’র কাজিবাড়িতে। সেখানে জানাজা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে।
 
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন কন্যার জনক কাজী জাফর আহমেদের ছোট মেয়ে কাজী রুনা আহমেদ অবস্থান করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে দ্রুত দেশে আসার চেষ্টা করছেন তিনি।
 
বড় মেয়ে কাজী জয়া আহমেদ ও ছোট বোন কাজী সোনিয়া আহমেদ ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। সারাদিন বাবার মরদেহের পাশেই ছিলেন তারা।
 
ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে রাজনীতি অঙ্গনে প্রবেশ কাজী জাফর আহমেদের। ১৯৫৫ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে রাজনীতিতে তার পদচারণা  শুরু।
 
১৯৩৯ সালের ১ জুলাই কুমিল্লার প্রখ্যাত চিওড়া কাজী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মেধাবী ছাত্র হিসেবে কাজী জাফর আহমদ খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এমএ (ইতিহাস) পাস করেন।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ এবং এল.এল.বি. কোর্স সম্পন্ন করা সত্ত্বেও কারাগারে চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারেননি।
 
কাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এপসু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
 
ছাত্রজীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২-১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান। এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
 
কাজী জাফর আহমেদ ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টি সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯-১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
 
১৯৮৬-১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ও ১৯৮৯-১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ পর্যন্ত  পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
 
২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি সে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
এজেড/এবি/জেডএম

** গুলশান বাসভবনে মরদেহ, শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন খালেদা
** কাজী জাফরের মৃত্যুতে মহিলা দলের শোক
** কাজী জাফরের মরদেহে শ্রদ্ধা জানালেন খালেদা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।