ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জাতীয় ঐক্য গড়তে ১১ দফার সনদ দিলেন ড. কামাল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
জাতীয় ঐক্য গড়তে ১১ দফার সনদ দিলেন ড. কামাল ড. কামাল হোসেন

ঢাকা: জাতীয় ঐক্য গড়তে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ১১ দফার ‘জাতীয় ঐক্যের সনদ’ ঘোষণা করেছেন।

সুস্থ রাজনীতি, কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ সনদের ঘোষণা দিলেন তিনি।

 

রোববার (৩০ আগস্ট, ২০১৫) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওম শফিউল্লাহ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
 
দেশের মানুষ ইতিহাসের এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

‘জাতীয় ঐক্যের সনদ’-এ বলা হয়, জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সহিংসতা পরিহার করে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে গুরুত্ব সহকারে অবশ্যই আলোচনা ও সংলাপ করতে হবে।
 
ড. কামাল হোসেন দেশকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, মা অসুস্থ হলে আপনি কী করবেন; তাকে রোগ মুক্ত করবেন। দেশ এখন রোগাক্রান্ত। রোগ এখন চিহ্নিত। যে বিষয়গুলোতে আমরা উদ্বিগ্ন, সেগুলো রোগ। রোগমুক্তির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য সবাই মিলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
 
জাতীয় ঐক্যের সনদ বাস্তবায়নে কী কী কর্মসূচি গ্রহণ করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, গণসংযোগ, গণজাগরণ ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।
 
প্রতিবারই কর্মসূচি ঘোষণার পর তা বাস্তবায়নে মাঠে থাকেন না, কোনো ঝুঁকি নেন না। এবার ঝুঁকি নেবেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ঝুঁকি তো আমি সারা জীবনই নিয়েছি। এবারও ঝুঁকি নেবো।
 
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম নেতা পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণই সব ক্ষমতার মালিক। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কেন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে?
 
হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে এসব বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, আমি তিনবার চেষ্টা করে সমাবেশ করার অনুমতি পাইনি।
 
গণফোরাম ঘোষিত জাতীয় ঐক্যের সনদে নির্বাচন, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জানমালের নিরাপত্তা, বিনাবিচারে আটক, গ্রেফতার, পুলিশ-প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করাসহ ১১ দফায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

দফাগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রথম দফা- সমগ্র জাতি আজ একটি অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ; যে পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। জাতীয় ঐক্যের ও জনগণের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে যে, জনগণই ক্ষমতার মালিক এবং জনগণ সে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে।

দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে- কেবলমাত্র কালো টাকা, সন্ত্রাস ও সশস্ত্র ক্যাডারমুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ সৎ, যোগ্য ও কার্যকর জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে।

তৃতীয় দফায় বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ। কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে পরিচালনা করা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সচেতনভাবে লালন করা।
 
চতুর্থ দফা- বহু দলীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় ও জনস্বার্থে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্মান ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে।
 
পঞ্চম দফা- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মের অপব্যবহারের মাধ্যমে চরমপন্থা, অসহিষ্ণুতা, সন্ত্রাসবাদ এবং বৈষম্যমূলক আচরণের কোনো স্থান আমাদের সমাজে অবশ্যই থাকবে না।
 
ষষ্ঠ দফা- সংবিধান অনুযায়ী আইনের প্রতি অনুগত থেকে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যথেচ্ছা গ্রেফতার, বিনাবিচারে আটক, আটক অবস্থায় নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ বাংলাদেশ সংবিধান অনুমোদন করে না।
 
সপ্তম দফা- সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী সুরক্ষিত মানবাধিকারের প্রতি অবশ্যই সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
 
অষ্টম দফা- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে এবং শিক্ষার পরিবেশ, একাডেমিক মর্যাদা ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে অনুষদগুলোর শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতি এবং ছাত্রভর্তি ও ছাত্রের মান নির্ধারণে দলীয় বিবেচনার পরিবর্তে মেধা ও যোগ্যতাকে বিবেচনা করতে হবে।
 
নবম দফা- রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাহী বিভাগের যে কোনো প্রভাব থেকে মুক্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
 
দশম দফা- সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাজ ও পরিবারগুলোর মধ্যকার বৈষম্যগুলো দূর করার লক্ষ্যে জনগণের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এতে সমাজ থেকে শুধু দরিদ্রতাই দূর হবে না; বরং নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে।
 
একাদশতম দফা- জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের স্বার্থে কৃষক শ্রমিকসহ সমাজের সব মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমন নীতি-কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যেন জাতীয় সম্পদ ও মানব সম্পদকে সমন্বিত করে জাতীয় অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করা যায়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা যায়, এমন নীতি-কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ঢাকাবারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি জগলুল হায়দার, ফরোয়ার্ড পার্টির সভাপতি মোস্তফা আমিন প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
এমইউএম/এনএ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।