ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রায়ের খসড়া ফাঁসের মামলায় চার্জ (অভিযোগ) গঠনের শুনানি ফের পিছিয়েছে। সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে এ চার্জ শুনানির দিন আগামী ১৫ অক্টোবর পুনর্নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (৫ অক্টোবর) মামলাটির চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তার পক্ষে সময়ের আবেদন জানান আইনজীবী।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসএম শামসুল আলম শুনানি শেষে চার্জ শুনানির জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর নতুন করে দিন ধার্য করেছেন।
মামলার চার আসামি সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ম্যানেজার একেএম মাহবুবুল হাসান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী (সাঁটলিপিকার) ফারুক হোসেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলী কারাগারে আটক আছেন। তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
জামিনে থাকা সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
গত বছরের ২৮ আগস্ট ডিবির পরিদর্শক মো. শাহজাহান ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ ৭ আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা ‘রায়ের খসড়া কপি’ সংবাদকর্মীদের দেখান।
রায় ঘোষণার পরদিন ২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। মামলায় ট্রাইব্যুনালের ফারুক ও নয়ন এবং ব্যারস্টার ফখরুলের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদীকে আসামি করা হয়েছিল।
এছাড়া ওই বছরের ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
মামলায় বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের দিন রায় ঘোষণার আগেই তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ‘রায়ের খসড়া কপি’ দেখান। তারা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে, রায়ের কপি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা রায় ঘোষণার আগেই পেয়েছে। তারা রায়ের স্পাইরাল বাইন্ডিং কপি মিডিয়াতে প্রদর্শন করেন এবং সেটি নিয়েই তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন।
চার্জশিটে বলা হয়, মিডিয়ায় রায় প্রকাশিত হলে পরিচ্ছন্নকর্মী নয়ন আলী মেহেদী হাসানের চেম্বারে যান এবং রায় কিভাবে ফাঁস হলো জানতে চান। মেহেদী হাসান তাকে জানান, রায়ের কপি তার কাছ থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার নিয়ে গেছে।
তারাই অনলাইনে এ রায় ফাঁস করেন। মেহেদী নয়ন আলীকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
নয়ন আলীর জবানবন্দির ভিত্তিতেই ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে মর্মে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশ বিদেশে বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করতেই কৌশলে রায়ের খসড়া কপি সংগ্রহ করেন। পরে তা এমএস ওয়ার্ড থেকে পিডিএফ এ রুপান্তর করে www.traibunalleaks.be নামক অনলাইনে প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৫
এমআই/এএসআর