ময়মনসিংহ: গোল টেবিলের উপরে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বোতলের ফাঁকে ফাঁকে জ্বলছে মোমবাতি। ভ্যাপসা গরমে দরদরিয়ে ঘামছেন সিনিয়র নেতারা।
মোমবাতির ক্ষীণ আলোয় এভাবেই দীর্ঘদিন পর জরুরি সভা করলো ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি। শহরের হরিকিশোর রায় রোডের দলীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ে দল পুনর্গঠনে এ মতবিনিময় সভা চলাকালে রাত সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলেও ঘেমে একাকার নেতারা মজেছিলেন দল পুনর্গঠনের আলোচনায়।
সিনিয়র নেতাদের বক্তৃতা শুনে বাইরে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী এ সময় মন্তব্য করলেন, দু:সহ গরমে, মোমবাতির আলোতেও নেতারা বক্তৃতা চালিয়ে যাচ্ছেন। দল গঠন, পুনর্গঠনে মতামত দিচ্ছেন। মোমবাতির আলোয় সত্যিই এ এক বদলে যাওয়া বিএনপি।
মতবিনিময় সভার শুরুতেই ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বললেন, কোন ব্যক্তির প্রতি ক্ষোভ না ঝেড়ে, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোথায় আছে, সেটা নিয়ে কথা বলতে হবে। মতামত দিতে হবে।
ত্রিশাল উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ক্ষোভ ঝাড়লেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি রোকনোজ্জামান সরকার রোকনের অনুপস্থিতিতে শুধু সাধারণ সম্পাদকের একক স্বাক্ষরে উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি বাতিল ও পরবর্তীতে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে। এ কমিটি গঠনের বেলায় উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের কোন মতামত নেয়া হয়নি বলেও যোগ করেন তিনি।
ফুলবাড়িয়া পৌর বিএনপি’র সভাপতি এ.কে.এম.শমসের আলী নিষ্ক্রিয়দের দল থেকে ছাঁটাই করার আহবান জানিয়ে বলেন, জেলার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা মূল স্রোতের বাইরে কমিটি দেন। শ্রমিক দলের পৌর কমিটি যাদের দেয়া হয়েছে তাদের আমরা চিনি না। এ অবস্থার অবসান জরুরি।
শহরের ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে দল চলবে না। এমন মতামত যখন দিচ্ছেন তখনই হাওয়া হয়ে গেলো বিদ্যুৎ। ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলো দলীয় কার্যালয়ে। শুরু হলো মোমবাতির জন্য হাহাকার। দলীয় অফিস পিয়ন জুয়েল মিনিট দুয়েক পর নিয়ে এলেন একখানা মোমবাতি।
আলো-আঁধারিতে তখনও বক্তৃতা করে যাচ্ছেন ওয়ার্ড বিএনপি নেতা কামাল। তিনি যখন থামলেন তখন শুরু করলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ তানভীর তান্না। কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে পাঠানো চিঠি পড়ে সারাংশের উপর তিনি বক্তব্য রাখছিলেন।
ঠিক তার পাশ থেকেই মোমবাতি ধরে রেখেছিলেন দলীয় কোষাধ্যক্ষ রতন আকন্দ। এর মিনিট পাঁচেক পর ৪ থেকে ৫ টি মোমবাতি নিয়ে আবারো হাজির হলেন অফিস পিয়ন জুয়েল।
বিদ্যুৎ চলে যাবার পরই অফিস থেকে বারান্দায় যাবার একটা ধুম পড়ে। এ ধুমের নেতৃত্ব দিলেন সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আতিক। যাবার আগে বললেন, দম বন্ধ অবস্থা, টেকা দায়। সুযোগ বুঝে অফিস কক্ষ ত্যাগ করলেন মহিলা দল নেত্রী রোকসানা শিরিন। কিন্তু গরম জয় করে বসে থাকতে দেখা গেলো আরেক মহিলা দল নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন পারভীনকে।
এ প্রবণতা দেখে মাইক হাতে নিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ওয়াহাব আকন্দ। বললেন, একদিন একটু কষ্ট করি। কষ্ট সবারই হচ্ছে। গরম তো আমাদেরও লাগছে।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সাবেক এমপি শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ভালুকা উপজেলা বিএনপি সভাপতি ফখরুদ্দিন বাচ্চু, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও কোতোয়ালী বিএনপি সভাপতি কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ, উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা লিটন আকন্দ প্রমুখ।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন পর ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র জরুরি সভা (মতবিনিময় সভা) অনুষ্ঠিত হলেও এ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন দলীয় সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন। তিনি প্রথমদিকে এ সভার সঙ্গে সহমত পোষণ করে সভা আহবান করলেও সোমবার রাতে হঠাৎ করেই একক সিদ্ধান্তে তিনি জরুরি সভা স্থগিত করে চিঠি ইস্যু করেন।
কিন্তু তার স্থগিত চিঠি উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে দলীয় সভাপতি’র সিদ্ধান্তের প্রতি নেতা-কর্মীদের অনাস্থারই বহি:প্রকাশ ঘটেছে বলে মত তৃণমূলের কর্মীদের।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
জেডএম