ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মুজাহিদ-সাকার রিভিউ আবেদন

‘ফাঁসি বহাল থাকবে’, ‘মৃত্যুদণ্ড টিকবে না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
‘ফাঁসি বহাল থাকবে’, ‘মৃত্যুদণ্ড টিকবে না’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও খন্দকার মাহবুব হোসেন

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানিতে ফাঁসির আদেশ বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

ফৌজদারি মামলায় রিভিউ আবেদন গ্রহণের সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, আশা করি, রিভিউয়েও এ দু’জনের ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকবে।



অন্যদিকে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর প্রধান আইনজীবী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন মনে করেন, রিভিউ শুনানিতে যদি সাক্ষ্য-প্রমাণের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড হয়তো টিকবে না।

সাকা চৌধুরীর বিষয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশে ছিলেন না। ওই সময় তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করতেন। রিভিউ আবেদনে এটাই যুক্তি সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। এ কারণে তিনিও খালাস পাবেন বলে আশা করছি।

বুধবার (১৪ অক্টোবর) মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পৃথক পৃথকভাবে এসব মন্তব্য করেন তারা। নিজ কার্যালয়ে মাহবুবে আলম আর সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের।
 
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল মামলাগুলোর মতোই রিভিউ আবেদন দু'টির শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সর্বোচ্চ আদালতে। অন্যদিকে দু’জনেরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

এর আগে সকালে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে পৃথকভাবে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী।  

মোট ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন মুজাহিদ। রিভিউয়ের পেপারবুক দাখিল করা হয়েছে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার। অন্যদিকে সাকা চৌধুরী তার ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন।

রিভিউ আবেদনের দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আগামী মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি বসবেন। খুব সম্ভবত ওইদিনই রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারণ হতে পারে।
 
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন সময়ে রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির।

খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালে কোনো সাক্ষী মুজাহিদকে আলবদর কমান্ডার বলেননি। এমনকি তদন্তকারী কর্মকর্তাও বলেন নাই। রিভিউ আবেদনে মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘দ্যা ভ্যানকুয়িস্ট জেনারেল অ্যান্ড দ্য লিবারেশন অব বাংলাদেশ’ নামে একটি বই দাখিল করা হয়েছে। যে বইয়ে জেনারেল রাও ফরমান আলী ও জেনারেল নিয়াজী সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আলবদর বাহিনী পাকিস্তানি আর্মির সহায়ক বাহিনী ছিল। তারা আর্মির অধীনে কাজ করতো। তাহলে মুজাহিদের মতো একজন নাগরিক কিভাবে সেই বাহিনীর প্রধান হতে পারেন?

এসব বিষয় পর্যালোচনা করলে মুজাহিদের দণ্ড বাতিল হবে এবং আদালত অন্যভাবে বিষয়টি দেখবেন বলেও মনে করেন তিনি।
 
গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদ-সাকার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাদেরকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ।   একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।
 
নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেছেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী।
 
যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
 
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট  আপিল করেন মুজাহিদ।
 
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
ইএস/এএসআর

** মুজাহিদ-সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন দাখিল
** সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন দাখিল
** মুজাহিদের রিভিউ আবেদন দাখিল
** মুজাহিদের ৪০, সাকার ১৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ বুধবার
** মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে আইনজীবীরা
** বিকেলে মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করতে চান ৫ আইনজীবী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।