ঢাকা: ‘কাল (শুক্রবার) সারাদিন বাসাতেই ছিলেন তিনি (নিহত গিয়াস)। কিন্তু রাতে মোবাইলে একটি কল আসে।
স্বামী হারানোর কথা এভাবেই বিলাপ করে বলছিলেন রাজধানীর ডেমরায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক গিয়াসের স্ত্রী নাসিমা আকতার।
দুর্বৃত্তদের হাতে স্বামীকে হারিয়ে যেন চোখে অন্ধকার দেখছেন নাসিমা। ছেলে-মেয়ে ও স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
বলছিলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফোন আসার পর তাকে বাইরে যেতে বাধাও দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের বাধা উপেক্ষা করে জরুরি ফোন বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান। রাত ১১টার দিকে তার (গিয়াস) মোবাইলে কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। ভেবেছি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকায় হয়তো তার ফোন বন্ধ। ’
‘কিন্তু রাতে বাসায় ফেরেননি তিনি। এরপরও চিন্তা হয়নি; কারণ প্রায়ই রাজনৈতিক কারণে রাতেও বাইরে থাকতেন তিনি। সকালে ঝিলের পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা বাসায় খবর দেয়, সেখানে আমার ছেলে গিয়ে তার বাবার লাশ পড়ে থাকতে দেখে,’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
দুপুরে রাজধানীর ডেমরার পশ্চিম সানারপাড়ায় একটি ঝিল থেকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক গিয়াসের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ডেমরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কুদ্দুস বাংলানিউজকে জানান, খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল ঝিলের একটি পুরানো বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহতের বড়ভাই হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে জানান, তারা চার ভাই। এরমধ্যে তিনিই বড়। গিয়াস স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেশ কয়েকবছর থেকে এখানেই থাকছিলেন। আর তিনি থাকেন দক্ষিণ সানারপাড়ায়। বাকি ভাইরা কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
তিনি বলেন, গিয়াস আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। বিভিন্ন সময় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ বিএনপির স্থানীয় নেতারাও হুমকি-ধমকি দিয়েছেন।
নিহত গিয়াসের ছোটভাই মো. আলম বলেন, ‘অনেকদিন আগে রাজধানীর মতিঝিলে গিয়াসের মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা ছিল। এরপর রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। স্থানীয় বিচার সালিশে ভাইয়ের বেশ প্রভাব ছিল। কেউ আক্রোশ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। ’
নিহত গিয়াসের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে উজ্জ্বল নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়েন, মেয়ে হ্যাপি একাদশ শ্রেণিতে পড়েন স্থানীয় কলেজে এবং ছোট ছেলে জুয়েল এসএসসি পরীক্ষার্থী।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে নিহতের বড় ছেলে উজ্জ্বল বলেন, ‘বাবার হত্যার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লিটন ও কামালকে সন্দেহ করছি। তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। আগে এইজন বিএনপি করতো, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়; এ নিয়ে বাবার সঙ্গে দ্বন্দ্বও ছিল। ’
তবে ভাই হত্যার জন্য সরাসরি লিটন ও কামালকেই ‘দায়ী’ করছেন গিয়াস উদ্দিনের ছোটবোন নীপা আকতার।
নিহত গিয়াসের রাজনৈতিক সহকর্মী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস শুক্কুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী নেতায় পরিনত হয়েছিলেন গিয়াস। এটা তার প্রতিপক্ষের সহ্য হচ্ছিল না। আর প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা এ হত্যা করেছে।
** ডেমরায় আ’লীগ নেতার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
এনএইচএফ/এমএ