ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রায়ের খসড়া ফাঁসের মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম।
সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) শুনানি শেষে ব্যারিস্টার ফখরুলের এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে জামিনের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন।
এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসএম শামসুল আলমের আদালতে।
এ মামলার সাত আসামির মধ্যে সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন চার আসামি। অন্য তিনজন হচ্ছেন- সাকার ম্যানেজার একেএম মাহবুবুল হাসান এবং ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী (সাঁটলিপিকার) ফারুক হোসেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলী। জামিনে আছেন সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। ব্যারিস্টার ফখরুলের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে গত ২১ নভেম্বর রাতে। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা ‘রায়ের খসড়া কপি’ সংবাদকর্মীদের দেখান।
রায় ঘোষণার পরদিন ০২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। ০৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
গত বছরের ২৮ আগস্ট ডিবির পরিদর্শক মো. শাহজাহান ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের দিন রায় ঘোষণার আগেই তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ‘রায়ের খসড়া কপি’ দেখান। তারা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে, রায়ের কপি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা রায় ঘোষণার আগেই পেয়েছেন। তারা রায়ের স্পাইরাল বাইন্ডিং কপি মিডিয়াতে প্রদর্শন করেন এবং সেটি নিয়েই তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন।
এতে বলা হয়, মিডিয়ায় রায় প্রকাশিত হলে পরিচ্ছন্নকর্মী নয়ন আলী মেহেদী হাসানের চেম্বারে যান এবং রায় কিভাবে ফাঁস হলো জানতে চান। মেহেদী হাসান তাকে জানান, রায়ের কপি তার কাছ থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার নিয়ে গেছে। তারাই অনলাইনে এ রায় ফাঁস করেন। মেহেদী নয়ন আলীকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
নয়ন আলীর জবানবন্দির ভিত্তিতেই ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশ বিদেশে বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করতেই কৌশলে রায়ের খসড়া কপি সংগ্রহ করেন। পরে তা এমএস ওয়ার্ড থেকে পিডিএফ এ রুপান্তর করে www.traibunalleaks.be নামক অনলাইনে প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এমআই/এএসআর