ঢাকা: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর ‘মশাল’ প্রতীক হাসানুল হক ইনুকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এতে ‘হতাশ’ হয়ে পড়েছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে লেখা একটি চিঠিতে ওই হতাশার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।
ঘটনার শুরু গত ১২ মার্চ। সেদিন দলটির কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি অংশ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে মইনউদ্দিন খান বাদলকে কার্যকরী সভাপতি ও নিজে সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করেন আম্বিয়া। এদিকে কাউন্সিলে হাসানুল হক ইনু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিরিন আখতার নির্বাচিত হন। তারাও একটি কমিটি গঠন করেন।
ঝামেলা তৈরি হয় চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলটির চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে। এ সময় আম্বিয়া এবং ইনু- দুপক্ষের কমিটিই তাদের নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক ‘আম’ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ইসিতে দাবি জানান।
উদ্ভূত পরিস্থিতে ‘মশাল’ কার হাতে যাবে, তা নির্ধারণে গত ০৬ এপ্রিল দু’পক্ষেরই শুনানি করে ইসি। তবে শুনানিতে কোনো পক্ষই সিদ্ধান্ত না চাওয়ায় আপাতত দু’পক্ষকেই ‘মশাল’ দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। কিন্তু গত ১০ এপ্রিল ‘মশাল’ অন্য কাউকে না দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে চিঠি দেন হাসানুল হক ইনু।
এরপর শুনানির সময় দু’পক্ষের দাখিল করা দলিলাদি পর্যালোচনা করে জাসদের সভাপতি হিসেবে ইসি’র কাছে ইনুই প্রতীয়মান হন। এজন্য তার অংশটিকেই মূল জাসদ বিবেচনা করে ‘মশাল’ প্রতীক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচন কমিশন।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে গত ২৪ এপ্রিল ইসিকে উকিল নোটিশ দেন আম্বিয়া। এরপর ২৮ এপ্রিল চিঠি দিয়ে ইনুকে মশাল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেয় ইসি। আর আম্বিয়াকে জানায়, তার জন্য কিছু করার নেই সংস্থাটির।
উকিল নোটিশের পর এবার ইসি’র কাছে হতাশা ব্যক্ত করে চিঠি দিয়েছেন জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও একাংশের সভাপতি আম্বিয়া।
সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে লেখা গত ১২ মে’র ওই চিঠিতে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে জেনেছি, নির্বাচন কমিশন আমাদের দলের প্রতীক ‘মশাল’ হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন দলকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত আমাদেরকে হতাশ ও বিব্রত করেছে। তাই ওই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করার জন্য জাসদের পক্ষ থেকে আপনার সমীপে দরখাস্ত পেশ করছি’।
আবেদনটি গ্রহণ করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি অব্যাহত রাখতে ইসি তাদের সহায়তা করবে বলেও চিঠিতে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
ইসি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-সচিব পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ইসি সিদ্ধান্ত যা দেওয়ার দিয়েছে। এখন কোনো কিছু করতে হলে আদালতে যেতে হবে।
২০০৮ সালে ১৩ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসিতে নিবন্ধন পায় জাসদ। তখনও হাসানুল হক ইনুই দলটির সভাপতি ছিলেন।
জাতীয় সংসদে জাসদের মোট ছয়জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার অংশটিতে চারজন এমপি রয়েছেন। তাদের মধ্যে নাজমুল হক প্রধান ও রেজাউল করিম তানসেন মশাল নিয়েই নির্বাচিত হয়েছেন। মইনউদ্দিন খান বাদল নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। আর লুৎফা তাহের সংরক্ষিত আসনের এমপি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৬
ইইউডি/এএসআর