ফেনী: ২০০২ সালে ঘোষিত হওয়ার পর দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে টানা ১৪ বছর পৌর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বিএ। এবারও তিনি বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
অন্যদিকে উন্নয়নের স্বার্থে পরিবর্তন চায় পৌরবাসী- এমন স্লোগান নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন পৌর আ’লীগ সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফা।
রাত পোহালেই শুরু হবে ভোট যুদ্ধ। ভোট যুদ্ধে যিনি জয়ী হবেন তিনিই হবেন পৌরপিতা। তবে বিগত উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা মনে করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কিছুটা ‘সন্দিহান’ সাধারণ ভোটাররা।
আবার অনেক আশা-প্রত্যাশা নিয়ে পৌর মেয়র নির্বাচিত করে কিছুই না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
এরইমধ্যে পৌর এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অলিগে-গলিতে একটি আলোচনা-আশঙ্কা, নিজের ভোট নিজে দেওয়া সুযোগ পাবো তো? নাকি উপজেলা নির্বাচনের মতো হবে? ক্ষমতাসীন দল প্রভাব খাটিয়ে তাদের জয় নিশ্চিত করতে চাইবে।
তবে এর পাল্টা যুক্তিও দিচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা। তাদের মতে, দুই বার নির্বাচিত হয়ে টানা ১৪ বছর পৌর মেয়র ছিলেন আলমগীর বিএ। এক যুগেরও বেশি সময় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি। অনেকের মতে শুধু নিজের ঝুড়ি ভরেছেন! তাই এবার একটা পরিবর্তন দরকার।
পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম ছাগলনাইয়ার বাসিন্দা সালেহ আহম্মদ জানান, পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এ দীর্ঘ সময়ে ড্রেনেজ, পয়ঃনিষ্কান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ নাগরিক কোনো সেবাই দৃশ্যমান নয়। এই দীর্ঘ সময়ে পৌরবাসীকে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেননি মেয়র।
একই ধরনের অভিযোগ পৌর এলাকার বাঁশপাড়ার বাসিন্দা আসলাম উদ্দিনেরও।
পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মেয়র পদে আ’লীগ মনোনীত মোহাম্মদ মোস্তফাসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা খোশ মেজাজে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর বিএ ও সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে কেন্দ্র দখলের পায়তারা করছে ক্ষতাসীন দলের প্রার্থী।
যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করারও দাবি জানা তিনি।
তবে এসব অভিযোগ স্রেফ ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। তারা বলছেন, পৌরবাসী এবার একটা পরিবর্তন চায়। ভোটারদের হাবভাব দেখে এমনটিই মনে হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে তারা কিছুই না পেয়ে হতাশ। তাই এর থেকে বেরিয়ে আসতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকেই মেয়র হিসেবে দেখতে চায় পৌরবাসী।
এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৭,৮,৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে শাহেনা আক্তার ও ৯ নম্বর পূর্ব ছাগলনাইয়া ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মুন্সী নুর হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আলমগীর বিএ বাংলানিউজকে জানান, তিনি এবং তার দলের নেতাকর্মীরাসহ সাধারণ ভোটাররা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এর আগে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করার জন্য প্রতিপক্ষ বোমা হামলাসহ প্রতিনিয়ত নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হয়ে পৌর এলাকার অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ শেষ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন দাবি জানান আলমগীর বিএ। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী পৌর আ’লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফা শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে বাংলানিউজকে জানান, তিনি বিজয়ী হলে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা করে পরিকল্পনা, পুল-কালভার্ট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তা-ঘাট সংস্কার, পৌর কবরস্থান, মসজিদ-মক্তোব সংস্কার, মাটি ভরাট, সৌর বিদ্যুৎ, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, ময়লা-আবর্জনা ফেলার সুব্যবস্থাসহ জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ করবো।
এদিকে, এ পৌর নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রহমত উল্লাহ (হাতপাখা প্রতীক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নানামুখি চাপ ছিলো। নির্বাচনী প্রচারণা ভালোভাবে শেষ করেছি। কিন্তু ২৫ মে কী হবে জানি না।
এদিকে নির্বাচন অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিস, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নানা অভিযোগ দিয়েছেন প্রার্থীরা।
রিটার্নিং অফিসার মেজবা উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যাচাই-বাছাই শেষে ১ নম্বর ওয়ার্ডে চারজন, ২ নম্বরে ৫, ৩ নম্বরে ৫, ৪ নম্বরে তিনজন, ৫ নম্বরে ছয়জন, ৭ নম্বরে পাঁচজন, ৮ নম্বরে পাঁচজন প্রার্থী সাধারণ কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। এছাড়া সংরক্ষিত আসনে ১ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে দু’জন মহিলা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৮.৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছাগলনাইয়া পৌরসভায় মোট ভোটার ২৯ হাজার ৯৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৩৭৪ জন ও ১৪ হাজার ৫৭৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ খান চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, প্রার্থী ও ভোটার এবং পুরো নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।
তৃতীয় ধাপে পৌরসভা নির্বাচনে ২৫ মে ছাগলাইয়া পৌরসভায়ও তৃতীবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
এসএইচ