ঢাকা: না কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, না চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কোথাও উপস্থিতি নেই নেতাকর্মীদের। বিএনপিতে এ অবস্থা চলছে অনেক দিন ধরে।
কমিটি ঘোষণায় দীর্ঘসূত্রতা এবং সিনিয়র নেতা ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে দূরত্বের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অনেকেরই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে অনীহা দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্বও বেড়েছে ওই সব সিনিয়র নেতাদের। এ কারণে কর্মীরাও যোগ দিচ্ছেন না সাংগঠনিক কর্মসূচিতে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি দলীয় কর্মসূচিতেই কর্মীদের উপস্থিতি শুধু কম দেখা যায়নি, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীও পালিত হচ্ছে দায়সারা গোছের। ৩০ ও ৩১ মে এবং ১ জুন তিনদিনের কর্মসূচি নেওয়া হলেও প্রথম দু’দিনে কর্মীদের উপস্থিতি ছিল খুবই নগন্য।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সভা-সমাবেশে দলের মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ছাড়া তেমন কাউকেই দেখা যায়নি। বিগত আন্দোলনগুলোতেও এ দু’জন নেতা ছাড়া সিনিয়র কোনো নেতা কর্মীদের খবর রাখেননি। নামেননি মাঠেও।
আন্দোলনের সময় অধিকাংশ নেতাকর্মীই ছিলেন আত্মগোপনে। পুলিশি নির্যাতন আর মামলা-হামলা মাঠকর্মীদেরই সামাল দিতে হয়েছে অনেক কষ্টে। তারা দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও খোঁজ নেওয়া হয়নি কেন্দ্র থেকেও।
২০১৪ ও ২০১৫ সালের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতাদের আত্মগোপনই তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভের কারণ বলে মনে করেন বিএনপির এক নেতা। তার মতে, এর পরিপ্রেক্ষিতে দলের পরীক্ষিত এসব কর্মীরা এখন দলের কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ দিন উপলক্ষে ঢাকায় দু’একটি আলোচনা সভা আর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি ব্রিফিংয়ে কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে দলটির সাংগঠনিক কাযক্রম।
জিয়াউর রহমানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত দুই দিনে ২৫টি স্পটে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। সবগুলো স্পটেই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
যদিও দলটির প্রধান খালেদা জিয়া নিজেই দুস্থদের হাতে খাবার দিয়েছেন।
তিনদিনের কর্মসূচির তৃতীয় দিন বুধবার (১ জুন) আরো ১৫টি স্পটে খাবার বিতরণ করবেন খালেদা। দলের সিনিয়র এক নেতার মতে, এ কর্মসূচিও আগের দুই দিনের চেয়ে ভিন্ন কিছু হবে না।
আর রাজধানীর বাইরে এ অবস্থা আরো নাজুক। কোনো কোনো এলাকায় সীমিত আকারে কর্মসূচি পালিত হলেও অনেক জেলায় খবরই ছিল না।
সব মিলিয়ে কর্মীদের স্বত:স্ফূর্ততার অভাবেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে নামকাওয়াস্তে ও দায়সারাভাবে।
বিএনপির এক নেতা বলেন, ২০১৪ সালের আগেও রাজধানী ঢাকায় শতাধিক স্পটে খাবার বিতরণ করেছেন খালেদা। এসব অনুষ্ঠানে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হতেন। কিন্তু এ বছর তিনি মাত্র কয়েকটি স্পটে খাবার বিতরণ করলেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। জেলা ও উপজেলা শহরে তো এ কর্মসূচির কোনো প্রভাবই পড়েনি।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াসউদ্দিন মামুন বাংলানিউজকে বলেন, সিনিয়র নেতারা দায়সারাভাবে কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। কর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। বিগত আন্দোলনের সময় নেতাদের আত্মগোপনের কারণেও কর্মীরা খুবই ক্ষুব্ধ। আর এসব কারণেই ওইসব নেতারা ডাকলেও অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে না তারা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন কর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে- এ কথা স্বীকার করে বলেন, দল গোছাতে দীঘর্সূত্রতাও কর্মীদের মধ্যে হতাশার অন্যতম কারণ। যতো দ্রুত কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে, ততো তাড়াতাড়ি দল আরো শক্তিশালী হবে বলেও মনে করেন তিনি।
‘হাজার হাজার মামলা ও পুলিশি হয়রানির শিকার হওয়া কর্মীদের কিছুটা হলেও দুর্বল করেছে’- বলেন ফরিদ হোসেন।
ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত বাংলানিউজকে বলেন, কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রতা ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দূরত্ব বৃদ্ধির কারণে ডাকলেই কর্মীরা সাড়া দিচ্ছেন না কর্মসূচিতে। আন্দোলনের সময় সিনিয়র নেতাদের খোঁজ-খবর না নেওয়া কর্মীদের ক্ষোভের আর একটি কারণ।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
এমএম/এএসআর