ঢাকা: নবম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্ত আসন সংখ্যার সাতগুণের বেশি পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমন্বয় করা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত শনিবার (০৪ জুন) ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে নবম ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ইসির তৈরি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ছয় ধাপে মোট ৪ হাজার ৮৭টি ইউপির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে আওয়ামী লীগ ২ হাজার ৬৪৫টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী। যা সব ইউপির ৬৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর বিএনপি চেয়ারম্যান পেয়েছে ৩৬৭টি ইউপিতে। যা মাত্র ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ বিএনপির প্রাপ্ত আসনের সাতগুণেরও বেশি আওয়ামী লীগের।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৮৭৪টি আসন। যা মোট আসনের ২১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা পেয়েছেন ২০৭টি। যা মোট আসনের ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুইজন প্রার্থী স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট ২০৫ জনের সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
এদিকে জাতীয় পার্টি পেয়েছে ৫৫টি আসন, যা মোট আসনের ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জাতীয় পার্টি-জেপি পেয়েছে ৫টি আসন, যা মোট আসনের শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে পেয়েছে ৩টি করে আসন, যা মোট আসনের শূন্য দশমিক ০৭৩ শতাংশ। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ পেয়েছে ৭টি আসন, যা মোট আসনের শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। আবার জাকের পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পেয়েছে ১টি করে আসন, যা মোট আসনের শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ।
অন্যদিকে নির্বাচনী কারচুপির জন্য স্থগিত ভোটকেন্দ্রের পুননির্বাচন প্রয়োজন ১০৯টি ইউপিতে। যা মোট ইউপির ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর রাঙ্গামাটি থেকে ফলাফল আসেনি ১৭ ইউপিতে। যা মোট আসনের শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০টি। এগুলোর মধ্যে এবারের ইউপি নির্বাচনে ২১টি দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ইসিকে জানায়। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও জাকের পার্টি।
এই দলগুলোর মধ্যে ৭টি দলের কোনো অর্জন নেই। এমনকি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ও জাতীয় সমাতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র মতো দলগুলোও কোনো আসনে জয় পায়নি, অর্থাৎ ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৩১টি দল ভোটের মাঠে অকার্যকর।
ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করার মূল উদ্দেশ্যই হলো তৃণমূলে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়ানো। কিন্তু দেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয় এ নির্বাচনে অন্য দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং অর্জন হতাশাজনক।
কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী সচিব মো. রাজীব আহসান জানান, দেশের মোট ইউপির সংখ্যা ৪ হাজার ৫৫৫টি। এগুলোর মধ্যে ৪ হাজার ২৭৫টি ইউপিতে মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তুতি নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে এগুলোর মধ্যে বেশ কিছুর নির্বাচন পরবর্তীতে বাতিল হয়। অবশিষ্টগুলোতে প্রায় চার মাস ধরে ছয় ধাপে ভোটগ্রহণ শেষে নবম ইউপি নির্বাচন শনিবার শেষ করা হয়। মেয়াদ না হওয়ায় এবং অনিয়ম ও আদালতের নিষেধাজ্ঞার জন্য যেসব ইউপিতে নির্বাচন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন সেগুলোতে পরবর্তীতে ভোটগ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩১ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
ইইউডি/আইএ