ঢাকা: দেশে চলমান সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য’র প্রয়োজনে ক্ষমা চাইবে জামায়াত। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার অপরাধে জাতির কাছে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে খালেদা জিয়াকে এমন পরামর্শই দিয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা।
কেউ কেউ আবার জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ বা বলেছেন, চিরতরে না ছাড়লেও বর্তমান পরিস্থিতি শামাল দিতে আপাতত জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কমাতে হবে বিএনপিকে। কিছুটা দূরত্ব রেখে চলতে হবে। তবে এসব মনোযোগ দিয়ে শুনলেও চূড়ান্ত কোনো ফায়সালা দেননি বিএনপির চেয়ারপারসন জোট নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি জাতীয় ঐক্য গড়ার পক্ষে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরুল মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. অধ্যাপক সদরুল আমীন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক মহিউদ্দিন আলগীর, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (অ্যাব) আহ্বায়ক আ ন হ আখতার হোসেন, ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ড্যাব) মহাসচিব ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সমন্বয়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, এগ্রিকালসারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (এ্যাব) সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, রুহুল আমীন গাজী, বিশিষ্ট গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
রাত সাড়ে ৮ টায় শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় রাত ১১ টায়। টানা আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। তবে আলোচনার বিশাল অংশ জুড়ে ছিলো জোট শরিক জামায়াত। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশিষ্টজনদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় ঐক্য গড়ার পথে জামায়াতকেই প্রধান অন্তরায় বলে উল্লেখ করেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, একাত্তরের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য গোলাম আযম ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয়ভাবে জমায়াত ক্ষমা চায়নি। আজকের বৈঠকে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ ছিলো, পূর্ব পূরুষের কৃতকর্মের জন্য জামায়াত দলীয়ভাবে ক্ষমা চাইবে, তাদের ভুল স্বীকার করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করবে।
তিনি বলেন, দেশে আরো দশটি ইসলামিক রাজনৈতিক দল আছে, যারা একাত্তরের বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলো, তারা রাজনীতি করতে পারলে জামায়াত পারবে না কেন? আর জামায়াত যদি এত খারাপ হয়ে থাকে তাহলে নিষিদ্ধ করছে না কেন? আমরা মনে করি একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াত ক্ষমা চাইবে এবং ৯১ এর গণআন্দোলনে যেমন ভূমিকা পালন করেছে, ফের তারা সেই ভূমিকা পালন করবে।
জামায়াত ক্ষমা না চাইলেও কী বিএনপি তাদের জোটে রাখবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, সবাই বললে তারা ক্ষমা না চেয়ে যাবে কোথায়?
এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার মনোভাব কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ কথা বলে মনে হয়েছে তিনিও চান, জামায়াত ক্ষমা চেয়ে নতুন করে রাজনীতি শুরু করুক।
এছাড়া জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন জেলায় জেলায় সফর করে জনমত তৈরির কাজ শুরু করবেন বলে জানান ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী।
এদিকে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐক্য সবাইকে নিয়েই হবে। দলমত নির্বিশেষে সবাই এখানে থাকবে। কাউকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় না।
এর আগে ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, এখন আর কী হবে? এখন গণআন্দোলন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
এজেড/টিআই