ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) ও ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের উপ-নির্বাচন সোমবার (১৮ জুলাই)। কাঙ্খিত এ ভোটের মাধ্যমে এ দু’আসনের প্রায় ৬ লাখ ভোটার নির্বাচন করবেন গত নির্বাচনে তাদের ভোটে নির্বাচিত সদ্যপ্রয়াত দুই সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রীর উত্তরসুরীদের।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো এবারো এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছে বিরোধী দলের সম্মান হারানো রাজনৈতিক দল বিএনপি।
তবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির দু’জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ দু’ আসনে। দু’টি আসনেই শেষ পর্যন্ত নৌকার সঙ্গে ভোটের লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা।
ইউনিয়ন পরিষদের পর সংসদ নির্বাচনের ভোট হওয়ায় গ্রামীণ জনপদে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি বিরাজ করছে নানা শঙ্কাও। বিশেষ করে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে প্রার্থীদের মাঝে।
সীমান্তঘেঁষা জনপদ হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১ আসন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের কিংবদন্তি নেতা অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদেও এ আসন থেকে জিতে দু’দফা সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গত ১১ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রমোদ মানকিনের মৃত্যু হলে উপ-নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাবার শূন্য আসনে দলেন মনোনয়ন পান ছেলে জুয়েল আরেং। তার সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা খাতুন ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন। তাদের মধ্যে ভোটের মাত্র দু’দিন আগে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন সোহরাব।
এ দুই প্রার্থীর জনসংযোগে তোজজোড় না থাকলেও ঠিকই মাঠ চষে বেড়িয়েছেন জুয়েল। নৌকা প্রতীক আর বাবার উন্নয়ন- এ দু’বিষয় ভোটের মাঠে জুয়েলকে ফেভারিট করে তুলেছে।
এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জুয়েল তার বাবার উত্তরসুরী হিসেবেই সংসদে যাবার সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
রাজা-জমিদারদের তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত গৌরীপুর উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ-৩ আসন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. মুজিবুর রহমান ফকির।
রাজনৈতিক জীবনে আলোচিত-সমালোচিত এ নেতা গত ০২ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
উপ-নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রায় এক ডজন মনোনয়ন প্রার্থীর ভিড়ে নৌকা প্রতীক পান বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ। তার বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন জাতীয় পার্টির শামসুজ্জামান জামাল, ইসলামী ঐক্যজোটের হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফেজ আজিজুল হক ও ন্যাপের প্রার্থী আব্দুল মতিন।
নৌকা প্রতীকের বদৌলতে অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন ভোটের মাঠে নিজের একক আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফকিরের উত্তরসুরী তিনিই হতে যাচ্ছেন এমন মত দলীয় নেতাকর্মীদের।
দুই আসনেই শুরুর দিকে নির্বাচনী আমেজে ভাটা পড়লেও প্রচারণার শেষ ক’দিনে উত্তাপ ছড়ায় ভোটের মাঠে। ক্ষমতাসীন দলের ওই দু’প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মো. ইকরামুল হক টিটুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা প্রচারণা চালিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন ভোটের মেজাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এমএএএম/এএসআর