ঢাকা : শুক্রবার (৫ আগস্ট) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের ৬৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বহুমাত্রিক ও অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক ছিলেন শেখ কামাল। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি, লেখাধুলা, শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গণেও তার বিচরণ ছিলো। তিনি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
রাজধানীর বিএএফ শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স পাস করেন।
শেখ কামাল বাংলাদেশ ছাত্র লীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে যথোচিত ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকহানাদার বাহিনী দ্বারা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন শেখ কামাল।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।
বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি।
স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি প্রথমসারির সংগঠক ছিলেন। বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’।
শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধূলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল তাঁর।
তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশে নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মান উন্নয়নে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সাথে নিয়মিত অনুশীলন করতেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই দেশবরেণ্য অ্যাথলেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ সুলতানা খুকুর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাত্রিতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে জাতিরজনকের হত্যাকারী মানবতার ঘৃণ্য শত্রুদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনিও শাহাদাত বরণ করেন।
এই সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এম. এ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) শহীদ শেখ কামালের ৬৬তম জন্মদিনকে যথাযোগ্যভাবে পালনের জন্যে আওয়ামী লীগ সকাল ৮টায় ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এছাড়াও কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে শহীদ শেখ কামালের ৬৬তম জন্মবার্ষিকী দেশবাসীকে সাথে নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সর্ব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় ০০৫০ ঘন্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৬
এসকে/এমএমকে