বিপরীতে বেশ সংগঠিত আওয়ামী লীগ। ২০১২ সাল থেকেই এ জেলায় অবস্থান জোরদার কছে তারা।
অস্তিত্ব সংকটে বিএনপি
বিএনপির এক সময়কার ঘাঁটি ছিল ফেনী জেলা। এখন এখানে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই বললে চলে। রাজপথে আন্দোলনতো দূরের কথা। কেন্দ্রঘোষিত নিয়মিত কর্মসূচিও পালনে ব্যর্থ নেতারা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা পর্যায়ের নেতারা সরকারি দলের সঙ্গে আতাঁত করে চলছেন। নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গা বাঁচিয়ে রাজনীতি করছেন। এসব ঢিলেমি ও অনৈক্যের কারণে জেলার সবকটি পৌরসভা, উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ এবং সব ক’টি ওয়ার্ডে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা জানান,অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে না আনার কারই এহেন নাজুক অবস্থা। মামলা হামলার ভয়তো আছেই। রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া কর্মীদের খবরই নেন না জেলা নেতারা। এমনটা চলতে থাকলে ফেনীতে বিএনপির নাম নেয়ারও কেউ থাকবে না।
দলের জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট তাহের জানান, নতুন করে চাঙ্গা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে দলটি।
এজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় এসে কথা বলে গেছেন নেতা-কর্মীদের সাথে। তাদের আশাবাদ, নতুন কমটি হলে অচলাবস্থা কাটবে। যদিও এর আগে নানা ঘটন-অঘটনে ফেনী বিএনপির একাধিক সভা-সম্মেলন পন্ড হয়ে গেছে। সর্বশেষে চলতি মাসের ৭ তারিখ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে শহরের কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সভাটি সফলভাবে সমাপ্ত হয়। কিছুটা বিশৃঙ্খলা থাকলেও হই-হাঙ্গামা হয়নি। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক। অনেকে মনে করছেন, নতুন কমিটি এলে জেলা বিএনপির স্থবিরতা কেটে যাবে। তবে শোনা যাচ্ছে, বারবার উদ্যোগ নিয়েও কমিটি গঠনে ব্যর্থ হাইকমান্ড। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে ফেনী বিএনপির কমিটি করার দায়িত্ব দিয়েছেন।
সংগঠিত আওয়ামী লীগ
জেলায় আওয়ামী লীগের এখন জমজমাট অবস্থা। শক্ত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থানে এখন তারা। জেলা, উপজেলা পৌরসভাসহ সব পর্যায়েই কমিটি সচল রয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ার মত আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নেই বললেই চলে।
সম্প্রতি ফেনীর মিজান ময়দানে মাদকবিরোধী সমাবেশে ফেনী-০২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঘোষণা দেন, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনটি আসনেই তিনি নেত্রীকে জয় উপহার দেবেন। দল যাকে মনোনয়োন দেবে তার জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করবেন।
ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর পরেই অনুষ্ঠিত হয় ৬টি উপজেলা সম্মেলন। সবক’টিতেই কমিটি রয়েছে। জেলার ৫টি পৌরসভাতেও আওয়ামী লীগের কমিটি রয়েছে। দলের সব কার্যক্রম চলছে পূর্ণ উদ্যমে। যে কোনো কর্মসূচি জাঁকালোভাবে পালন করা হয়। প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে।
আগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও এখন একদমই নেই। জয়নাল হাজারী এবং বতর্মান এমপি নিজাম হাজারীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা দ্বন্দ্বেরও অবসান ঘটেছে। জয়নাল হাজারী ফেনীতে ঢুকতে না পারায় তার হাতেগোনা সমর্থকরা কোন্দলে না জড়িয়ে নিজাম হাজারীর সঙ্গে হাত মিলিয়েই কাজ করছেন।
জেলা,উপজেলাসহ প্রতিটি পর্যায়েই রয়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান। গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফেনীর ছয় উপজেলার প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগের চেয়্যারম্যান প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী। ৫টি পৌরসভার সবক’টিতেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জয়ী। একটি ছাড়া সবক’টি ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত। জেলার সাধারণ মানুষ মনে করছে, বিএনপির অবস্থান দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এ জেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে শক্ত কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আর নেই।
বাংলাদেশ সময় ১৩২২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
এসএইচডি/জেএম