বাজেট পেশের ১১ দিন পর রোববার (১২ জুন) দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এতে মূল বক্তব্য লিখিত আকারে উপস্থাপন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।
বিএনপি নেতারা বলেন, অব্যাহত চাঁদাবাজিসহ ব্যবসায় ব্যায়ভার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারছেন না। সঙ্গত কারণেই তারা সরকারের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ট্যাক্স দিতে পারছেন না। ফলে মূল অর্থনীতি থেকে সরে এসে সাধারণ মানুষের উপর বিভিন্ন প্রকার কর আরোপ করে রাষ্ট্রের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যওয়ায়, বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতিও। আর ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের রিয়েল ইনকাম (মূল আয়) কমে গেছে। এই কমে যাওয়ার পরিমাণ ৮ শতাংশ। সুতরাং এখান থেকেও কমেছে আয়কর। এইসব ঘাটতি মেটাতে বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ব্যাংকে রাখা আমানতের উপর আবগারি শুল্ক বসানো হয়েছে-যা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটাকে কোনো অবস্থাতেই স্বাস্থ্যকর বাজেট বলার সুযোগ নেই-বলেন বিএনপি নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, টাকা অংকের দিক থেকে এ বাজেট বাংলাদেশের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম বাজেট। এই বাজেট বিশ্লেষণ করে আমরা যুগপৎ বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা বলতে পারি, এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যে সকল মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে সেগুলোর কাজ ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করাই সরকারের লক্ষ্য। এর জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর অর্থ। সেই অর্থের যোগান দেখানোর জন্যই জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে একটি গাণিতক হিসেবের বাজেট পেশ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে এসব প্রকল্পকে নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।
সকল পণ্যের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাজেটে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ। ভারতে ভ্যাটের হার ১২.৫ শতাংশ, নেপালে ১৩ শতাংশ, মালদ্বীপে সকল পণ্যে ৬ শাংশ ও পযর্টনে ১২শতাংশ। বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে এর হার ১০ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলছেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে এবং কোনো অবস্থাতেই কোনো পণ্যের দামি বাড়বে না। অর্থমন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে এমন উদ্ভট তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়- বলেন বিএনপির মহাসচিব।
কৃষিযন্ত্র ট্রাক্টরের ওপর বাড়তি ১৯ শতাংশ কর আরোপের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজারে এখন ট্রাক্টর বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকায়। এ হিসেবে ট্রাক্টর প্রতি গড় মূল্য ১০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে ১৯ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে প্রতিটি ট্রাক্টরের গড় মূল দাঁড়াবে ১২ লাখ টাকা। এতে ব্যাহত হবে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, কমে যাবে উৎপাদন। সুতরাং এ কর প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক’র সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সাধারণত ১-২ লাখ টাকার মধ্যেই ব্যাংকে সঞ্চয় করে থাকে। এক লাখ টাকার ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৮০০ টাকা। ফলে আমানতকারীরা এখন শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এতে করে ব্যাংকে টাকা রাখার ব্যাপারে তারা নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। অনুষ্ঠানিক খাতে লেন-দেন বাড়বে। সুতরাং আমরা বর্ধিত শুল্ক আরোপ বাতিল এবং ব্যাংক ব্যবস্থার পরিপূর্ণ সংস্কার দাবি করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬/আপডেট ১৭২৬
এজেড/বিএস