দল ও জোট নেতাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও ধর-পাকড়ের বিষয়টি নানা অবস্থান থেকে মূল্যায়ন করছেন দলটির নেতারা। এর নেপথ্যে নির্বাচনের আগাম বার্তাও দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধোলাইপাড়ের একটি বাড়িতে ‘গোপন’ বৈঠককালে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জামায়াতের মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকিরসহ ৮ জনকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এর তিনদিন পর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কাযালয়ে জরুরি বৈঠক করেন দলটির শীর্ষনেতারা।
রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ’ হলেও হঠাৎ করে জোট নেতাদের ধর-পাকড়ের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের এ ধর-পাকড় নির্বাচনের আভাস দিচ্ছে। ভোটের রাজনীতিতে বিরোধী দল যেন স্বাভাবিক অবস্থানটা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য সরকার আগে-ভাগেই ধরপাকড় শুরু করেছে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের এগোতে হবে’।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘অতীতেও দেখা গেছে, হয়রানিমূলক ধর-পাকড়টা শুরু হয় জামায়াতকে দিয়ে। আর শেষ হয় বিএনপির শীর্ষনেতাদের দিয়ে। সুতরাং, এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কি, সেটি আগে-ভাগেই ঠিক করে ফেলতে হবে’।
বিএনপি নেতাদের এমন মূল্যায়নের মধ্যেই গত ০৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশের চেষ্টা চালালে ঢাকাসহ সারা দেশে দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আটক হন।
একই দিনে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির মো. শাহজাহান, সেক্রেটারি নজরুল ইসলামসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর হোসেন ঈসাসহ বিএনপি জোটের বেশ কয়েকজন নেতাকেও ঢাকার বাইরে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্রমতে, এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতারা ধরেই নিয়েছেন যে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ধর-পাকড়ের মহড়া শুরু করেছে সরকার। এটি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে। বিষয়টি মাথায় রেখেই কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে তাদের।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারের এ আচরণে অবাক হইনি। আপাতত আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, সরকার কি করতে চায়। পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নেবো’।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
এজেড/এএসআর