শুক্রবার (১১ মে) ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হবে। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে এই কমিটি ভোটের মাধ্যমে না সমঝোতার ভিত্তিতে হবে, এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। বিগত কয়েকটি কাউন্সিলে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়ে আসছে গোপন ব্যালটে ভোটের মাধ্যমে। তবে এই নির্বাচন সিন্ডিকেট দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, গোপন ব্যালটে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়, দক্ষ ও যোগ্য ছাত্র নেতাদের নির্বাচিত হয়ে নতুন নেতৃত্বে আসার ক্থা থাকলেও সিন্ডিকেটের দাপটে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতার সিন্ডিকেট দ্বারা প্রভাবিতরাই সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছে। এতে অনভিজ্ঞ, অজনপ্রিয় এমনকি বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত নেতারাও নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছে। ওই নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত ছাত্রলীগকে বিভিন্ন সময় পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সংকটে। এর ফলে ছাত্রলীগের আদর্শ ও ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। এই সুযোগ নিয়ে ছাত্রলীগের চেতনাপরিপন্থিরা সংগঠনে অনুপ্রবেশ করছে এবং স্থান করে নিচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের ঘটনা প্রকাশ্য আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগে অতীতে কখনো এ ধরনের অনুপ্রবেশের নজির নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। এর ফলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে এবং সংঘাত-সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনায় সরকার ও আওয়ামী লীগকে বার বার বিব্রত হতে হচ্ছে।
এসব বিষয় মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত কমিটি গঠনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সমঝোতার মাধ্যমে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ছাত্র নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর। গত ২ মে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেভাবে হওয়ার সেভাবেই হবে। ইতোমধ্যে কে কে প্রার্থী তাদের তালিকা নেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি আছে। তালিকায় আসা আগ্রহীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। সমঝোতা হলে নতুন কমিটির প্রেস রিলিজ দেওয়া হবে। এতে সফল না হলে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট হবে। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়ারও একটা ঝামেলা আছে। তারা ইয়াং ছেলে-পেলে, ভোটের মধ্যে অনেক কিছুই হতে পারে। তারা প্রভাবিত হতে পারে। আমরা দেখবো ভোটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব এসেছে কি-না, না এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি চাই ত্যাগী, যোগ্য নেতৃত্ব। কারো পকেটের কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব হবে না। কোনো সিন্ডিকেট দ্বারা ছাত্রলীগ চলবে না। ছাত্রলীগ চলবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, শেখ হাসিনার নির্দেশনায়। এর বাইরে কোনো ভাবনা-চিন্তা করার অবকাশ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখবেন। তিনি যেভাবে বলেন সেভাবে হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সে সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই কমিটি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ