শনিবার (১২ মে) সকালে খুলনা মহানগরীর মিয়াপাড়ায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব অভিযোগ করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
এ সময় তিনি পুলিশের গণগ্রেফতার এবং হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।
মঞ্জু বলেন, শুক্রবার (১১ মে) বিকেল থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত আরও ২১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ আতঙ্কে রয়েছে দলীয় কর্মী এবং সাধারণ ভোটাররা। সরকারের সার্বিক আচরণে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখতে পাচ্ছে খুলনাবাসী। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মঞ্জু একটি অর্থবহ, অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন নির্বাচন দিতে কেসিসি নির্বাচনে আবারও সেনাবাহিনী নিয়োগের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া কোনভাবেই অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
মঞ্জু বলেন, সরকার এবং সরকারি দল আতঙ্ক ছড়িয়ে বিএনপিকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। বরং গণসংযোগে বেরোলেই জনতার ঢল নামছে। একারণে গণসংযোগ শেষ হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেওয়া হচ্ছে না- এমনকি অনেক নেতাকর্মীর পরিবারকে ঘরবাড়িও ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে, কর্মী-ভোটাররাও সেভাবে তৈরি হচ্ছে।
সময়মত কর্মীদের কাজে নামা এবং ভোটারদেরও ঘর থেকে বের হয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মঞ্জু।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এত ভয় কিসের? সরকারি দলের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নাকি উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা ভাসাবেন। তাহলে আমাদের ওপর কেন এত হানা? খুলনার জনগণ সাড়ে নয় বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ১৫ মে রায় দেবেন- এ বার্তা পেয়েই পুলিশকে ব্যবহার করে তারা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে।
মঞ্জু কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই শহরে সন্ত্রাসের মেয়র হয়ে আপনার সম্মান বাড়বে না। এভাবে গণগ্রেফতার, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যদি জিতেও যান তবে নগরবাসীর সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না। অবিলম্বে পুলিশকে গণগ্রেফতার বন্ধ করতে বলুন’।
তিনি তালুকদার আব্দুল খালেককে সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
মাত্র ২৮ দিনের প্রচারণায় ৩১টি ওয়ার্ডের সব এলাকা এবং সব ভোটারের কাছে পৌঁছাতে না পারায় তিনি নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমি একজন প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণায় থাকার কথা। কিন্তু প্রতিদিন আমাকে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের খবর নিতে হচ্ছে। তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে হচ্ছে। প্রেস ব্রিফিং করতে হচ্ছে। গণগ্রেফতারের কারণে কর্মীরাও ভোটারদের কাছে যেতে পারছে না।
মঞ্জু ভোটারদের নিজ দায়িত্বে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে আবারও সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জামায়াতের মহানগর শাখার সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা নাসির উদ্দিন, মুসলীম লীগের অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, বিজেপির নগর সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, বিএনপি নেতা শফিকুল আলম তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৮
এমআরএম/আরআর