শান্তিপূর্ণ ও সাদামাটা আয়োজনও যে উৎসবের রঙ ছড়াতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝানো যাবে না। ঢাক-ঢোল পিটিয়েও যেন এমন আনন্দের দেখা মিলবেন না।
মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিলের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) রাজশাহীবাসীর জন্য ছিল এমনটাই। মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশন (রাসিক) এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডেই উৎসবে মেতেছিল প্রার্থী ও ভোটাররা। জয়ের ব্যাপারে পূর্ণ আস্থা রেখে উৎসবের আমেজে স্ব-স্ব মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
সকাল থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সমর্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে গিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও মেয়র পদে চারজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৯ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
শেষ দিনে বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন, ১৪ দল মনোনীত প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মহানগর সভপাতি ও সদ্য বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ওয়াশিউর রহমান দোলন, হাবিবুর রহমান (স্বতন্ত্র), গণসংহতি আন্দোলনের (স্বতস্ত্র) অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে মোট সাতজন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলেন। এর মধ্যে মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাম সুইট তার মনোয়নপত্র দাখিল করেননি।
এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৩ জন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলেন। জমা দিয়েছেন ১৬৯ জন প্রার্থী। সিটি করপোরেশনের ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫২ জন নারী মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন। সবাই দাখিল করেছেন।
এদিকে, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত পাঁচ বছরে রাজশাহী নগরের কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় নগরবাসী এখন পরিবর্তন চাইছে। তার সময়ের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে নগরবাসী আরেক বার তাকে নগরপিতা হিসেবে বেছে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন লিটন।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, শাহীন আকতার রেনী, মাহফুজুর রহমান লোটন, নওশের আলী, নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, নগরের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, নগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন ও অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামানিক।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। তবে ভোট সুষ্ঠু হলে রাজশাহীতে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত। নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে বিএনপি দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে। আর সেই জন্যই কমিশনের প্রতি আস্থা না থাকলেও তিনি রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ সময় তার সঙ্গে রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জাল হোসেন তপু উপস্থিত ছিলেন। তবে ২০ দলীয় জোটের শরীকদের কোনো নেতাকে বুলবুলের সঙ্গে দেখা যায়নি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আজ শেষ দিনে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিল করা হয়েছে। নির্বাচনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য তারা এরই মধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। যাচাই-বাছাই ও প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।
এর পর থেকে প্রতিদন্দ্বী প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামতে পারবেন। এই সময় থেকে নির্বাচন পর্যন্ত মোট ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আচরণবিধি মনিটরিং করা হবে। কেউ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিকভাবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, এবার মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। আর নারীর সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি থেকে বেড়ে ১৩৮টি হয়েছে। বর্ধিত ভোট কেন্দ্রটি হচ্ছে অনন্যা শিশু শিক্ষালয়। এটি ২৪নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল আনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৮ জুন, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ ও ২ জুলাই; প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জুলাই এবং ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ শেষ করা হবে। আগামী ৩০ জুলাই সকাল থেকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৮
এসএস/ওএইচ