বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সভা কক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি এ পরামর্শ দেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে হবে। এ জন্য আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে কোনো ধরনের কোন্দল, দ্বন্দ্ব বা অনৈক্য দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হবে।
‘এসব আমি মেনে নেবো না, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা না বলে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নাম রটানো সহ্য করা হবে না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক মন্ত্রী-এমপির জরিপ রিপোর্ট আমার কাছে আছে। জরিপ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তারপক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
‘এলাকায় গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করেন। দলের নেতাকর্মীদের দূরত্ব থাকলে তা দ্রুতই মিটিয়ে ফেলেন,’ নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারও বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা জরুরি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা সকল বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, খুনিদের ফাঁসি দিয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি। আমাদের সরকারের সময় এই বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র ও যুদ্ধাপরাধীদের টাকা পয়সার অভাব নেই।
‘তারা টাকা ছড়ানো, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত, অনেক কিছুই করার চেষ্টা করতে পারে। তাই এই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের তো আমরা বিপদে ফেলতে পারি না। আমাদের সবার জন্যই আগামীতে আবারও ক্ষমতায় আসতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী অক্টোবরেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে বলে ধারণা করছি। সেজন্য আমাদের নির্বাচনের দ্রুত প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার কাছে জরিপ রিপোর্ট আছে, আরও জরিপ হচ্ছে। আমরা দ্রুতই দলের নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করবো।
দলীয় কোন্দলের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল, একটি বিশাল পরিবার। এ দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু প্রার্থিতার নামে অনেকেই রয়েছেন যারা নির্বাচনে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না, উল্টো দলের মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে কথা বলে পার্টির দুর্নাম করছেন।
‘এমপিদের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে দলের বিরুদ্ধে কথা বলা, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা। এটা সংরক্ষিত নারী আসনেরই হোক কিংবা দলের যে পর্যায়ের নেতাই হোন না কেন, এটা মেনে নেওয়া হবে না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাওয়া, দলের বিরুদ্ধে সহ্য করা হবে না। ’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, এমপি-মন্ত্রী হলে আশেপাশে অনেক সুবিধা ভোগী শ্রেণি তৈরি হয়। এতে দলের আসল নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত হন। দলের তৃণমূলের কর্মীরাই আমার কাছে আসল। তৃণমূলের কর্মীরাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য রাখতে হবে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা যেনো উপেক্ষিত না হয়।
বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী আগামী ৮ জুলাই জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়ানোর বিষয়ে আনা সংশোধন বিল পাসের দিন সবাইকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।
মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, এখন থেকেই আপনারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে দলকে শক্তিশালী করুন। অন্য দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাতে আওয়ামী লীগ একা না হয়। তবে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে নয়। জাতীয় পার্টি, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে, সমর্থন নিলে বিগত ১৯৯১ সালেই আমরা ক্ষমতায় যেতে পারতাম।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৮
এসকে/এমএ