ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

লিটনে একাট্টা জোট-মহাজোট, বুলবুলের পাশে নেই কেউ!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৮
লিটনে একাট্টা জোট-মহাজোট, বুলবুলের পাশে নেই কেউ! রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দু’দলের গণসংযোগ/ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই হাতে সময় যেন একদমই হাতে নেই প্রার্থীদের। প্রধান সড়ক থেকে পাড়া-মহল্লার ওলিগলি, প্রচার প্রচারণায় সর্বত্রই জমজমাট হয়ে উঠেছে। দুপুর ২টার পর প্রচার মাইকের নানান স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে গোটা মহানগর। প্রচারণার শেষ দিকে এসে প্রার্থীরা যেমন ভোটের হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন, ভোটারও তেমনি অংক কষছেন।

রাজশাহীর উন্নয়ন কাকে দিয়ে হবে, আর কাকে দিয়ে হবে না, চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা। এদিক থেকে  প্রচারণার শুরুতেই জোট ও মহাজোটের সমর্থন পেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন, নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

২০১৩ সালের নির্বাচনে ৪৭ হাজার ৩৩২ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে পরাজিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ নেতা।  

২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি পেয়েছিলেন একলাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পান ৮৩ হাজার ৭২৬ ভোট।

পরাজয়েরে পর থেকেই ঘুরে দাঁড়নোর চেষ্টায় সবটুকু সময় রাজনীতে দিয়েছেন লিটন। তার পক্ষে জনমত গড়তে পাঁচ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। আর নির্বাচনী ডামাডোল শুরুর ছয়মাস আগ থেকেই শুভেচ্ছা বিনিময় নিয়ে ভোটের মাঠে সরব ছিলেন রাজশাহীর এ সাবেক মেয়র।     

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দু’দলের গণসংযোগ/ছবি: বাংলানিউজ ফলও পেয়েছেন। নির্বাচন শুরুর পর পরই রাজশাহীতে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বৈঠকে বসে ১৪ দলীয় জোট। কয়েক দফা বৈঠক শেষে জোট থেকে একক প্রার্থী হিসেবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম পাঠানো হয় কেন্দ্রে। মতানৈক্য ভুলে লিটনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে সম্মত হয় জোট।

পরে গত ২২ জুন দলের সর্বোচ্চ ফোরামের বৈঠকের পর নৌকার বৈঠা তুলে দেওয়া হয় লিটনের হাতে। এর পর মনোনয়নপত্র তুললেও শেষ পর্যন্ত মহাজোট প্রার্থী সমর্থন দেন লিটনকে। গত ৭ জুলাই লিটনকে সমর্থন দিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওয়াসিউর রহমান দোলন। কেবল তাই নয়, লিটনের হাতে ফুলের নৌকা তুলে দিয়ে তার পক্ষে প্রচারণার প্রতিশ্রুতি দেন দোলন। সেই থেকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি রাজশাহীতে লিটনের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
   
এদিকে, রাজশাহীতে ১৪ দলের মুখপাত্র ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, এমপি গত ৯ জুলাই শরিকদের কর্মিসভা আহ্বান করেন। ওই সভায় জোট প্রার্থী লিটনের পক্ষে কাজ করতে সবাইকে আহ্বান জানান বাদশা। নির্বাচনে ১৪ দলের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য নিজ দলের নেতাকর্মীসহ অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান ফজলে হোসেন বাদশা। সেই থেকে ওয়ার্কার্স পার্টিসহ জোটের শরিক দলেরে নেতা কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

মহানগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জনাকীর্ণ এ কর্মীসভায় ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য বলে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে আমার প্রতি বাধা-নিষেধ আছে। কিন্তু পার্টি বা অন্য দলের কর্মীদের বাধা নেই। তাই নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে ওয়ার্কার্স পার্টিসহ জোটের কর্মী-সমর্থকরা মাঠে থাকুন। নৌকার জয় না দেখে কেউ ঘরে ফিরবেন না। মানুষের প্রতি এ যোগাযোগ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, খায়রুজ্জামান লিটন এবার অপরাজেয় হয়ে উঠেছেন। শুরু থেকেই ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোট লিটনের পক্ষে একাট্টা হয়ে ভোটের মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক নেতারা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন লিটনের পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করছেন। রাজশাহী শহরে বসবাসরত ৯ উপজেলা ও আট জেলার মানুষ নিজেরাই আলাদা আলাদাভাবে লিটনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে যে যার মত মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যা আগে কখনই হয়নি। এছাড়া পাঁচ বছর রাজশাহীর কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় সাধারণ মানুষও এবার লিটনকেই চাইছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ বা গণসংযোগে মানুষের উপস্থিতি এর প্রমাণ বলেও উল্লেখ করেন ড. খালেক।  

নির্বাচনে জয় প্রশ্নে গত ৫ বছরে রাজশাহীর কোনো উন্নয়ন হয়নি উল্লেখ করে নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৩ সালে আমি মেয়র নির্বাচিত হলে এতোদিনে অনেক উন্নয়ন হয়ে যেত। কিন্তু আমি মেয়র না হওয়ায় রাজশাহীবাসীর জীবন থেকে ৫টি বছর নষ্ট হয়ে গেছে। কেনো উন্নয়ন হলো না। গত পাঁচ বছর চেয়ে দেখেছি, কিছু করার ছিল না। তবে আমরা আর পিছিয়ে যেতে চাই না। গণসংযোগকালে সাধারণ মানুষ বুকে জড়িয়ে ধরছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নানান সমস্যার কথা বলছেন। আমি তাদের শান্ত করছি, আশ্বস্থ করছি এবার বিজয়ী হলে সব সমস্যার সমাধান করা হবে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততাই বলে দিচ্ছে এবার নির্বাচনে নৌকার বিজয় ইনশাল্লাহ্ সুনিশ্চিত।

এদিকে, শুরু থেকেই বিএনপির অগোছালো মাঠে অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিভেদ ও জোটের শরিকদের অসহযোগিতার কারণে একাই হাঁটছেন ধানের শীষের প্রার্থী বুলবুল। দল থেকে মনোনয়ন পেলেও শুরুতেই গত ২৮ জুন মহানগর যুবদল সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন। আর এর আগ থেকেই মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইনের পক্ষে পোস্টার সাঁটানো হয়। ফলে দল ও জোট নিয়ে টেনশনে পড়েন বুলবুল।

তবে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থকে নানান চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত সুইট মনোনয়নপত্র জমা দেননি এবং সিদ্দিক হোসাইনও মনোনয়নপত্র তোলেননি। তবে বুলবুলের নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত নিববন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্যে কোনো কর্মকাণ্ড নেই। বুলবুলকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদিন প্রচার করা হলেও জোটের প্রধান শরিক জামায়াত বুলবুলের হয়ে মাঠে নামেনি। এছাড়া রাজশাহীতে ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলোর অবস্থা বলা যায় প্রায় অস্তিত্বহীন।

বুলবুলের গণসংযোগকালে জামায়াতের সমর্থন প্রশ্নে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের চাপে ধানের শীষের প্রচারে মাঠে নেই জামায়াত। বিরোধীদের কণ্ঠরোধের জন্য ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, হয়রানি চলছে। এর মধ্যে জামায়াতকে আলাদা চাপে রাখা হচ্ছে। তবে প্রচারে না নামলেও এখনও জামায়াত তাদের সঙ্গে জোটেই রয়েছে।  

তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর মোট ২৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছি। দুই দফায় জেল খেটেছি ৬ মাস। যতদিন দায়িত্বে ছিলাম ততদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। তবে অনেক কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। আমি আশা করছি, এবার নির্বাচনেও মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে অসমাপ্ত কাজ শেষ করার সুযোগ দেবেন।

সদ্য সাবেক এ মেয়র আরও বলেন, বর্তমান সরকারের নির্যাতন ও অন্যায় অনাচারের মুখোশ উন্মোচন করতে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। বর্তমানে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের এ মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সে যুদ্ধে জয়ী হবো আমরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৮
এসএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।