এই দুই প্রার্থীকে ঘিরেই কৌতুহল নগরবাসীর। আগামীর নগর পিতা কে হচ্ছেন-আরিফ না কামরান? গত পাঁচ বছর নগর পিতার আসনে থাকা আরিফুল হক চৌধুরীর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, নাকি হারানো নগর পিতা উপাধি পুনরুদ্ধার করবেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান? এনিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
এসব হিসাব-নিকাশের সমাপ্তি ঘটছে সোমবার (৩০ জুলাই)। দিন শেষে কার মুখে ফুটবে শেষ হাসি, বিজয়ের মালা জড়াবে কার গলায়-এ জন্য কেবল ক্ষণ গণনার পালা।
দীর্ঘ ১৮ দিনের প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন প্রার্থীরা। নিজেদের জনপ্রিয় করে তুলতে শুনিয়েছেন আশার বাণী। এবার ভোটারদের বিবেচনা করার পালা।
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী (টেলিভিশন) এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান (আনারস) পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট। কামরানকে ৩৫ হাজার ১৫৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন আরিফুল হক।
সেসময় আরিফুল হকের সঙ্গে ছিল জামায়াত। তাছাড়া হেফাজত ইস্যুতে সরকারবিরোধী প্রভাব কামরানের ভোটে ছেদ ফেলেছিল। পাশাপাশি বর্ষায় প্রকৃতির বৈরী আচরণ বৃষ্টিপাতে নগরের জলাবদ্ধতা ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলেছিলো। যে কারণে ডিজিটাল নগরীর স্বপ্ন দেখিয়ে নির্বাচনী বৈতরনী পার হন আরিফুল হক চৌধুরী।
তবে এবার প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকায় অনেকটা ফুরফরে মেজাজে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আর প্রতীক হিসেবে নৌকা মার্কায় নির্বাচন হওয়াতে দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা কামরান বিরোধীরাও ঐক্যবদ্ধ নৌকা প্রতীকের কারণে। যে কারণে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সামনে প্রথমে অনেকটা বিধ্বস্ত অবস্থায় মেয়র প্রার্থী হন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী। কেননা, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আরিফের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন বদরুজ্জামান সেলিম।
তবে শেষ অবধি সেলিমকে বসে আনতে পারলেও জামায়াতকে বগলদাবা করে রাখতে পারেনি বিএনপি। যে কারণে ভোটের মাঠে খানিকটা হলেও পিছিয়ে ছিলেন আরিফ।
অবশ্য গত পাঁচ বছর মেয়রের চেয়ারে থাকা আরিফুল হক ২৯ মাস কারাগারে থাকায় উন্নয়ন করতে পারেনি। তিনি দুই বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে পূঁজি করেই জনতার কাছাকাছি পৌঁছার চেষ্টা করেছেন। সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমাপ্ত করতে ফের মেয়র হতে চাইছেন আরিফ।
অন্যদিকে, সিলেট পৌরসভা থাকাকালে সর্বপ্রথম কমিশনার হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। সেই থেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সিলেট নগরে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কামরান মাঝপথ থেকে আরিফুল হকে ধরাশায়ী হয়ে ছিটকে পড়লেও নিজের জনপ্রিয়তা ও দলীয় প্রতীক নৌকায় চলে আবারও হারানো নগর পিতার গৌরব ফিরে পাবেন নাকি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখিয়ে জনতার কাছাকাছি পৌঁছা আরিফ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নগর পিতার আসনে আসীন হবেন— তা দেখার অপেক্ষায় এখন ক্ষণ গণনার পালা।
সিসিকে চতুর্থ বারের এ নিবার্চনে ভোটের লড়াইয়ে মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৯৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ) স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), বাসদ মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর (মই) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান (হাত পাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহছানুল হক তাহের (হরিণ) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে ৬২ নারী ও ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১২৭ প্রার্থী।
সিসিক এবার মোট ভোটার তিন লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৫০৯ হাজার ২৮৮ জন রয়েছেন। এবার মোট ভোট কেন্দ্র ১৩৪টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি। তন্মেধ্যে অস্থায়ী ভোটকক্ষ আছে ৩৪টি।
২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। সে হিসেবে গত নির্বাচনের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৬৮৬ জন ভোটার বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
এনইউ/জিপি