শুরু থেকেই অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে প্রচার-প্রচারণার মাঠ বেশ চাঙ্গা করে রেখেছিলেন বিএনপির ধানের শীষ ও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। আর ভোটারদের হিসেবে মূল আলোচনায় ছিলেনও বিএনপির মজিবর রহমান সরওয়ার ও আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
এরবাহিরে নির্বাচনী মাঠে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নতুন নতুন সব সমীকরণ তৈরি করতে অনেকটাই বাধ্য করেছেন বাসদের মই প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী ও ইসলামী আন্দোলনের হাত পাখার প্রার্থী ওবাইদুর রহমান (মাহবুব)।
অপরদেকে জাতীয় পার্টির (বহিষ্কৃত) লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস কখনো বিদ্রোহী প্রার্থী ঝুনুর কারণে আবার কখনো দলীয় নানান সিদ্ধান্তের কারণে ভিন্ন রকম এক আলোচনা ছিলেন নগরবাসীর কাছে।
তবে সব হিসেব-নিকেশের অবসান ঘটছে সোমবার (৩০ জুলাই)। দিন শেষে কারও মুখে ফুটবে হাসি ও গলায় জড়াবে বিজয়ের মালা। আবার কেউ হবে বিমর্ষ-ব্যথিত।
যারমধ্য দিয়ে প্রায় আড়াইলাখ ভোটারের এ শহরের মসনদে বসবেন নগর পিতা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে মসনদে বসেন বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরওয়ার। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মেয়র নির্বাচিত হন প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ। আবার ২০১৩ সালে সেই হিরনকে হারিয়েই মসনদ দখল করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা আহসান হাবিব কামাল।
সেই হিসেবে সিটি করপোরেশনের ১৫ বছরের ইতিহাসে ১০ বছরই শাসন করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। যদিও ২০১৩ সালের নির্বাচনে হিরণ প্রায় ২০ হাজার ভোটে পরাজিত হলেও মূল হিসেবে দেখা যায় বেড়েছে আওয়ামী লীগের ভোট।
কিন্তু বিএনপির বিএনপির মেয়র প্রার্থী সরওয়ার শুধু সিটি মেয়রই ছিলেন না, বরিশালের এ সদর আসন থেকে চার বার হয়েছেন সংসদ সদস্যও। সে হিসেবে বরিশাল সদরকে বিএনপির ঘাটিই বলা হয়ে থাকে। যদিও এই ঘাটিতে উন্নয়ন করে তাক লাগিয়ে দিয়ে আধুনিক বরিশালের রূপকার ক্ষ্যাতিও অর্জন করেছেন হিরণ। সেইসঙ্গে বর্তমান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ হিরণের মৃত্যুর পর যেমন সু-সংগঠিত করেছে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগকে তেমনি আবার যুবদের কাছ থেকে পেয়েছেন যুবরত্ন খেতাবও।
সাদিকের মতে, আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণ বরিশাল সিটির যে উন্নয়ন করেছে সেটার সাক্ষী সবাই। আর বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ক্ষমতায় এসে কি করেছে তারও সাক্ষী সবাই। ভাঙা-চোরা রাস্তা-ঘাট আর জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী। শওকত হোসেন হিরণ এ নগর উন্নয়নে যা করেছেন তা বিগত দিনের কোনো মেয়রই করতে পারেননি। তাই এবারের ভোটের হিসেবে মানুষ উন্নয়নকে প্রধান্য দিবেন বেশি। সে হিসেবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন তারা।
এদিকে সিটির বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের বেশ চাপে থাকলেও দীর্ঘ ১৮ দিনের প্রচার-প্রচারণায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার তুলে ধরেছেন নিজের সময়ের নানান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা ও রাজনৈতিক নানান ইস্যু। সেই হিসেবে বিএনপিকেই মানুষ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে বিএনপি জোটের শরীক দল জামায়াত ইসলাম জোটের প্রার্থীর প্রচারণার মাঠে শুরু থেকেই নিজেদের কিছুটা আড়াল করে রেখেছিলো। বিষয়টি নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠলে প্রচারণায় নামলেও ২/১ জন নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আবার পিছু হটে তারা। তবে খেলাফত মজলিস প্রার্থীতা দিয়েও জোটের কারণে তা আবার প্রত্যাহার করে নিয়ে যেমনি পাশে ছিলো তেমনি শরীক দলের অনেকেই বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে চালিয়েছেন প্রচার-প্রচারণা।
অপরদিকে শুরু থেকেই ভিন্ন স্টাইলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে মাঠ চাঙ্গা করে রাখেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সব মেয়র প্রার্থী কাগুজে-কলমে ইশতেহার ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন নগরবাসীর সব চাওয়া-পাওয়াই আমার ইশতেহার। যদিও শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগকে জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী বশীর আহমেদ ঝুনু ও মহানগর জাপার একাংশ সমর্থন পেয়েছেন তিনি। তবে জাপার লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী তাপস নির্বাচনের মাঠে লড়াইটা চালিয়েই যাচ্ছেন।
বরিশাল সিটি করপোশেনের চতুর্থ বারের এ নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রের ৭৫০টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ৪টি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রে ৭৮টি কক্ষে ইভিএম এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মোট দুই লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটারের মধ্যে এক লাখ ২০ হজার ৭৩০ জন নারী ও এক লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন পুরুষ রয়েছে। শেষদিকে এসে সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী বশীর আহমেদ ঝুনু আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অপরদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯১ জন ও সংরক্ষিত আসনে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
এমএস/জিপি