তিনি বলেন, গত ক’দিন ধরেই মিডিয়ায় সরকারপ্রধান, সেতুমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী এবং সরকারি দলের ছোট-বড় নেতাদের যে বক্তব্য সবচেয়ে বেশি প্রচারিত হচ্ছে হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত।
সোমবার (২৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১১ সালে পুলিশ রিপোর্ট পেশ হওয়ার আগেই তৎকালীন আইনমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে জড়িত করা হবে। হয়েছেও তাই। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রায় হওয়ার আগেই কি করে বলতে পারেন যে এই মামলার রায় হওয়ার পর বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে পড়বে। এর অর্থ হলো তিনি জানেন কী রায় হতে পারে।
‘২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ালী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আমরা তখনও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি, এখনও জানাই এবং প্রকৃত দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কিন্তু এ ঘটনাকে পুঁজি করে সরকার যেভাবে বিএনপির মূল নেতাদের অন্যায়ভাবে বিপদাপন্ন করার জন্য সরকারের পুলিশ, গোয়েন্দা, তদন্ত কর্মকর্তা এমনকি বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নগ্ন প্রয়াস চালাচ্ছে তা কোনো সভ্য সমাজেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট ৫ম তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর যে চার্জশিট আদালতে পেশ করেন তাতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও সেই তালিকায় তারেক রহমানের নাম ছিল না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২৯ অক্টোবর ২০০৮ সালে এর ভিত্তিতেই ২২ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ ফ্রেম করে বিচার কাজ শুরু হয়।
‘মামলায় ৬১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়। ইতোমধ্যে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন হওয়ার পর গোটা ঘটনা এক অস্বাভাবিক মোড় নেয়। চার্জশিটে জিয়া পরিবারের কারো নাম না থাকায় সরকার চলমান সেই বিচার কাজ বন্ধ করে মামলা পরিচালনার জন্য একটি স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত করে। ২৫ জুন ২০০৯ এই নতুন কর্মকর্তা মামলাটির অধিকতর অনুসন্ধানের অনুমতি চাইলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আখন্দকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাওয়া কাহার আখন্দ প্রায় ২ বছর পর ২০১১ সালের ২ জুলাই তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। তাই এ অভিযোগের ভিত্তি ছিল ৪০০ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে মুফতি হান্নানের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। কিন্তু সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে মুফতি হান্নান সরকারের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছে। এখন তারা বিচার বিভাগকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণের অপচেষ্টায় রত।
এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, রাজনীতিতে এর বিষময় পরিণতি সম্পর্কে পুনরায় ভাবার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি। অন্যায়ভাবে মিথ্যা অভিযোগে খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে সরকার জনগণকে ক্ষুব্দ করেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেশে জনগণের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করবে। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে আমরা বরং আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে দেশের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয় মনে করি। নতুন সংকট সৃষ্টির পরিবর্তে সরকারের উচিত বিদ্যমান সমস্যাদি সমাধানে ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন মেসবাহ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৮
এমএইচ/এএ