তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন ভয়ে আতঙ্কিত। কারণ জনগণ তাদের সঙ্গে নেই।
শনিবার (০৬ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, ‘অবৈধ শাসক দলের নির্দেশে গত সেপ্টেম্বর মাসেই ৪ হাজার ১৮৯টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। এক মাসে ৮৬ হাজার ৬৯৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৩ লাখ ৬৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। গত মাসে ৪ হাজার ৬৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির তৃর্ণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৯০ হাজার ৩৪০টি মামলা দেওয়া হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ২৫ লাখ। এ সরকারের আমলে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ হাজার ১২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গুম করা হয়েছে ১ হাজার ২০৪ জনকে। ৪২৩ জনের এখনও কোনো হদিস নেই। ’
মির্জা বলেন, ‘রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপি বারবার সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে এলেও শাসকদল আওয়ামী লীগ তা নাকচ করে দেশকে গভীর রাজনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণ ভোট দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিএনপির সাত দফা দাবি মেনে নিলেই ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে। ’
বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য অবৈধ সরকার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এসব গায়েবি মামলার তদন্ত করে চ্যালেঞ্জ করলে সবাই বিপদে পড়বেন। গায়েবি মামলা করে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সব মামলার তদন্ত করা হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় অন্যায় প্রতিহিংসামূলকভাবে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তারেক রহমানকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হয়েছে। ’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘ন্যায় বিচার বা সুবিচার বলতে যেটা বুঝায়, সেটা একেবারেই নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার আপামর জনগণকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। জনগণের ওপর তাদের আস্থা নেই। নিম্ন আদালতের বিচারকদের কোনো স্বাধীনতা নেই। তারা আইন মন্ত্রণালয়ের কব্জিতে বাঁধা। ’
তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতা ছাড়া নির্বাচন করতে হীন ষড়যন্ত্র করছে অবৈধ সরকার। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে। ’
দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেকোনো দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ মুখ্য থাকে। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) সব কূট কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। হাতিরঝিল থানায় গায়েবি মামলার এফায়ারে বলা হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় হয়েছে তা খোদ মামলকারী পুলিশই জানে না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু তিনিও জানেন না। এটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার এসব কূট কৌশল করছে। দলের চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে কয়েকটি দাবি দিয়েছেন, বিভিন্ন দলও সেই দাবির প্রতি একমত। শুক্রবার (০৫ অক্টোবর) চটমোনাইর পীর সাহেবও প্রায় একই দাবি দিয়েছেন। সাধারণ জনগণ দাবির প্রতি নৈতিক ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে মামলা দেওয়া যাবে না তাই এখন গায়েবি মামলা দিচ্ছে। যাতে এসব মামলায় গ্রেফতার করতে পারে। ’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮, আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা
টিএম/আরবি/