ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সংলাপে দাবি না মানলে আন্দোলন: ঐক্যফ্রন্ট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৮
সংলাপে দাবি না মানলে আন্দোলন: ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যফন্টের জনসভায় বক্তব্য রাখছেন ড. কামাল/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে যাওয়ার একদিন আগে সরকারকে আল্টিমেটাম দিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। 

মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় এ আল্টিমেটাম দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, এ সরকার যদি আগামীকাল (বুধবার) সংলাপে আমাদের সাতদফা দাবি-দাওয়া মেনে না নেয়, তাহলে ৮ নভেম্বর রোড মার্চ করে ৯ তারিখ রাজশাহীতে জনসভা।

পরে খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহে জনসভা করা হবে। আর নির্বাচন কমিশন যদি সমঝোতার আগে তফসিল ঘোষণা করে তাহলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি দেয়া হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘৭ দফা দাবি আদায় না হলে আমাদের আপসহীনভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। ভোটের অধিকার আদায়ে পাহারাদার হতে হবে। সুষ্ঠু ভোট না হলে দেশের স্বাধীনতা আবারো বিপন্ন হবে।

সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিসহ সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ জনসভার আয়োজন করে। মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল  হোসেন। বেলা ২টায় কোরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক মাঠের মাধ্যমে এ জনসভা শুরু হয়। জনসভা শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টায়। দুপুরের আগেই মঞ্চের সামনে ও ডানে-বামে  নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল উদ্যান ছাড়িয়ে মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে গড়ায়। আশপাশের এলাকায় সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়। নেতা-কর্মীরদের অনেকের হাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সমাবেশে বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা নানা স্লোগান  দেন।

জনসভায় বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, জেএসডির তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, এম এ গোফরান, গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, ২০দলীয়  জোটের শরিক বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুর রকিব, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী, বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর একাংশের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, উত্তরের আহসানউল্লহ হাসান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান। জনসভা পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মমিনুল ইসলাম,  জেএসডির শফিকউদ্দিন আহমেদ স্বপন ও গণফোরামের মোশতাক আহমেদ।  

সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে শক্তভাবে দাঁড়াতে বলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশে যা হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। আইনের শাসনের লঙ্ঘন করা হচ্ছে, যাকে তাকে যেনো- তেনোভাবে  জেলে নিয়ে অন্তরীণ করা হচ্ছে। এগুলো করে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়, সংবিধানের কথা বলা হয়। সংবিধানকে ষোল আনা উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে আসছে। এ থেকে আমাদের বাঁচার উপায় হলো দেশের মালিক জনগণকে দাঁড়াতে হবে, শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। আমি বলতে চাই, রাস্তা বন্ধ করে, বাস বন্ধ করে, লঞ্চ বন্ধ করে জনগণকে নিস্ক্রিয় করা যাবে না। ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের অধিকার উদ্ধার করে ছাড়বে। জনগণ  জেগেছে,  দেশের মালিকরা জেগেছে। এ জাগরণের মধ্য দিয়ে আমরা দেশের মালিকানা ফিরে পাবো, জনগণের জয় হবেই। ’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এই পিজি হাসপাতালে ছোট্ট একটি কক্ষে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় বন্দি সময় কাটাচ্ছেন। আমি জানি না, জনগণের এই উচ্চারণ তার কানে পৌঁছাচ্ছে কিনা। আমি বিশ্বাস করি, তিনি সেখান  থেকে শুনছেন এবং বলছেন, এগিয়ে যাও, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য এগিয়ে যাও, বিজয় নিশ্চিত করো। কারাগারে যাওয়ার আগে তিনি বলে গেছেন, আমি কারাগারে যেতে ভয় পাই না। তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে। জাতীয় নেতাদের আহ্বান জানাবে। আজকে আল্লাহর কাছে এই শুকরিয়া আদায় করছি, এই মঞ্চে জাতীয় নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাচ্ছেন, জনগণের মুক্তি চাচ্ছেন। ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামীকাল একটা ছোট সংলাপের ডাক দিয়েছে। আমরা রাজী আছি। সংলাপে বিশ্বাস করি। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনগণের সমস্যার সমাধান হোক, জনগণ মুক্তি পাক। কিন্তু এটা নিয়ে নাটক করলে চলবে না। আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, জনগণের স্বার্থে ৭ দফা দাবি মেনে  নেবেন। ’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘এ লড়াই মুক্তির লড়াই, এ লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই,  আমরা দাবি আদায় ছাড়া ঘরে ফিরবো না। ৭ দফা দাবি মেনে নিন। তা নাহলে আপনার উপায় নেই। আর গায়েবী মামলা দেবেন না, কাউকে গ্রেফতার করবেন না,  খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি দিন। অন্যথায় খবর আছে। ’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি বিএনপিতে যোগ দেইনি। আমি ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেছি। আমি বলব, যদি আপনারা জিততে চান, তাহলে জয় আপনাদের হাতে। আর যদি হারতে চান তাও আপনাদের হাতে। যদি বিজয়ী হতে চান তাহলে নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি ভুলে যান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতাকা তলে হিমান্দ্রির মতো অন্তত পক্ষে সোজা হয়ে দাঁড়ান। ’

তিনি বলেন, ‘ বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ বিএনপি রাজকারের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছে। অভিযোগ সত্য নয়। আওয়ামী লীগ প্রথম শরিষাবাড়ির নুরু মাওলানার গাড়িতে পতাকা তুলেছে। আওয়ামী লীগ রাজাকার মহিউদ্দিনের গাড়িতে পতাকা তুলেছে, আওয়ামী লীগের আশিকুর রহমানের গাড়িতে পতাকা তুলেছে। গত ৪ তারিখ প্রধানমন্ত্রী এখানে এসেছেন। আল্লামা শফি ভুলে যেতে পারেন। আমি কাদের সিদ্দিকী ভুলি নাই, শাপলার চত্বরে ইমাম-ওলামাদের কিভাবে রক্ত ঝরিয়েছে। এ রক্তের বদলা না দিলে আমরা বেঈমানে পরিণত হবো। রিঅ্যাকশন দিতে হাসিনাকে। উপায় নাই। এ  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এনেছিলাম, আজকে বলে যাচ্ছি, ড. কামাল হোসেনের  নেতৃত্বে আমরা এ পল্টন থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো,  খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। ’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে। গণতন্ত্রের পক্ষে আমরা কালকে সংলাপে যাবো, কথা বলব। আপনাদের সমস্ত প্রাণের দাবি তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে দেবো। আমাদের একটাই দাবি, আপনারা সংবিধানে বাইরে বলে পদত্যাগ করেন, সংবিধানের মধ্যে যদি থাকতে চান সংসদ বাতিল করে  দেন। নতুন যে সরকার হবে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। দেশে নির্বাচন হবে, জনগণের বিজয় হবে,  সেই বিজয়ের লক্ষ্যে আপনাদের আগাম জানালাম। যদি সরকার দাবি না মানে তাহলে কি করবে? এই সভা থেকে, মঞ্চ থেকে জানাব এখান  থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত যত রাজপথ আছে প্রকম্পিত করে আমাদের দাবি আদায় করবো। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার  মোশাররফ  হোসেন বলেন, ‘৭ দফা দাবিতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। প্রথম সংলাপ কোনো কাজের সংলাপ হয় নাই। আমরা আগামীকাল যাচ্ছি। আমরা কোনো ঝগড়া করতে চাই না। আমরা বলতে চাই, আগামী দিনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহলমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নাহলে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা সংলাপে এখনো কোনো কিছু পাই না। আজকে সরকার যদি সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার মাধ্যমে না আসলে রাজপথ ও আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প থাকবে না। আপনারা প্রস্তুত হোন। এ জনসভা যথেষ্ট নয়। আজকে ২/৩/৪ লাখ মানুষ আছেন। আপনারা যদি মাঠে নামেন এ সরকারের পতন ২৪ ঘণ্টায় হবে। সেই দিনের আপনাদের প্রস্তুতি নিতে বলছি। ’

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়নের জোয়ারে তাদের চোখে ছানি পড়েছে, কানে শুনতে পারে না। উন্নয়ন ও দুর্নীতির কারণে তাদের উচ্চ রক্ত চাপ বেড়ে  গেছে। এর থেকে উত্তরণে সবাইকে এক হতে হবে। আর চুপ করে বসে থাকা যাবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৮
এমএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।