ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কথা রাখলেন রিজভী, ৭৮৭ দিন পর ফিরলেন নিজ বাসায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২০
কথা রাখলেন রিজভী, ৭৮৭ দিন পর ফিরলেন নিজ বাসায়

ঢাকা: ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে বাসা ছেড়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় রাত্রিযাপন করে আসছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি হন। পরে রিজভী প্রতিজ্ঞা করেন খালেদা জিয়া ঘরে না ফেরা পর্যন্ত তিনিও ফিরবেন না ঘরে।
 

নিজের প্রতিজ্ঞামতো দীর্ঘ ৭৮৭ দিন বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) নিজ বাসায় ফিরলেন রিজভী।  

বাসায় ফেরার প্রাক্কালে মোবাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আজ বাসায় ফিরছি।

দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় পর যাচ্ছি। ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়ার পর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তিনি বাসায় না ফেরা পর্যন্ত আমিও বাসায় যাবো না। গতকাল বুধবার তিনি বাসায় ফিরেছেন, আমিও আজ বাসায় ফিরছি।  

তিনি বলেন, দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন সব নির্দেশ মেনে চলেন। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবাইকে চিকিৎসকদের নির্দেশ মেনে ঘরে থাকতে হবে।  

২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে ও দলের দুর্যোগের সময় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন রিজভী। সে সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা বিএনপির জন্য ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন ভয়ঙ্কর আতঙ্কে। দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সদ্য কারামুক্ত খালেদা জিয়ার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ।  

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দেয়। ওইদিনই পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর রুহুল কবির রিজভী নিজে থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান করবেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ছোট একটি রুমে রাত্রিযাপন করা শুরু করেন রিজভী। সেখানে নিয়মিত দলীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে কুশল বিনিময় ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য যাতায়াত করতেন। এরইমধ্যে গড়িয়েছে বহু সময়। যা একে একে ৭৮৭ দিন পার হলো।

দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলনে এসে বক্তব্য রাখেন রিজভী। এছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে ছোট-বড় পরিসরে দুই  শতাধিক মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মিছিল করতে গিয়ে একাধিকবার সরকারি দলের লোকজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আসায় সমালোচনার পাত্র হয়েছেন দলের ভেতরে ও বাইরে। আহতও হয়েছেন দু’বার। তবুও হাল ছাড়েননি আশির দশকের এ ছাত্র নেতা। যিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে আহত হয়েছিলেন।

সরকারের নির্বাহী আদেশে বুধবার (২৫ মার্চ) ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফিরে যান নিজের গুলশানের বাসায়। এরপরই রিজভীও সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি আর দলীয় কার্যালয়ে রাত্রিযাপন করবেন না। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় ছেড়ে রাজধানীর আদাবরের ভাড়া বাসায় যান রিজভী।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাসায় যাচ্ছি তবে প্রতিদিনই অফিসে আসবো। অফিসের কাজকর্ম করবো। নেতাকর্মীদের আগামী কিছুদিন অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সাংবাদিকদেরও আপাতত ডাকছি না। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২০
এমএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।