ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গণফোরামের দুই পক্ষকে এক করতে চলছে ঐক্যপ্রক্রিয়া

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
গণফোরামের দুই পক্ষকে এক করতে চলছে ঐক্যপ্রক্রিয়া

ঢাকা: ড. কামাল হোসেনের প্রতিষ্ঠিত গণফোরামে উত্তেজনা চলছে দীর্ঘদিন। এরই মধ্যে একটি অংশ কামাল হোসেনের গণফোরাম থেকে বের হয়ে আলাদাভাবে কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছে।

তাদের ঘোষণার পরপরই মূল অংশও কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়। বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষকে এক করার উদ্যোগ নিয়েছেন ড. কামাল হোসেন নিজেই। এরই মধ্যে দুই পক্ষই ঘোষিত কাউন্সিল স্থগিত করার বিষয়েও একমত হয়েছে।  

জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবে বর্ধিতসভা ডেকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়। এর পরই ১৭ অক্টোবর বর্ধিত সভা ডাকেন ড. কামাল হোসেন ও রেজা কিবরিয়া। তারাও বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত নেন ১২ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের। একই সঙ্গে ওই বর্ধিত সভা থেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

এদিকে, মোস্তফা মহসীনের নেতৃত্বাধীন অংশ ২৬ সেপ্টেম্বরের বর্ধিত সভায় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াসহ চারজনকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। বহিষ্কারের ওই তালিকায় প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মহসীন রশীদ, আ ও ম শফিক উল্লাহ ও মোশতাক আহমেদও রয়েছেন।

এ অবস্থায় গণফোরামে দু’টি ধারার সৃষ্টি হয়। একটি ধারার নেতৃত্বে রয়েছেন মোস্তফা মহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিক। মূল ধারায় রয়েছেন ড. কামাল হোসেন, ড. রেজা কিবরিয়া, অ্যাডভোকেট মহসীন রশীদ ও মোশতাক আহমেদ।

সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে নিজের হাতে গড়া গণফোরামকে এ ভাঙনের মুখ থেকে রক্ষা করতে বৃদ্ধ বয়সে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। নিজে রাজনীতি থেকে বিদায়ের চিন্তা ভাবনা করলেও মৃত্যুর আগে দলের ঐক্য দেখে যেতে চান তিনি। সে কারণে এরই মধ্যে তিনি বেরিয়ে যাওয়া অংশের নেতাদের বাসায় ডেকে কথা বলেছেন। তাদের কাউন্সিল পিছিয়ে একই সঙ্গে দুই অংশ মিলে ১৫-১৬ জানুয়ারি করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ড. কামাল হোসেনের এ প্রস্তাবে দ্বিমত করেননি মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, সমঝোতার বিষয়টি এখনও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সমঝোতা আমাদের সবার কাম্য, আমরা সমঝোতা চাই। হলে ভালো, না হলে আমাদের সম্মেলন ঘোষিত তারিখে হবে। যদি অন্য কিছু ঘটে, তাহলে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে হয়তো তারিখটা পিছিয়ে দেব।

ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ উনি ডেকেছিলেন। আমরা গিয়েছিলাম। আবার ডাকলে যাব। উনি উদ্যোগ নিয়েছেন, সেজন্য ওনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ওনাকে বলেছি, আমাদের তরফ থেকে কোনো আপত্তি নেই। যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, আপনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে সেটা শেষ করে দেন।

সমঝোতার আশা করা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, হ্যাঁ আশা তো করা যায়, উনি সম্মতি দিয়েছেন। এখন ওনার সঙ্গের লোকজন কি করেন, সেটা তো আমরা বলতে পারি না। আশা করছি হবে।

নতুন কমিটি কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমঝোতা হলে আমরা সবাই মিলে বসে ঠিক করব।

সম্মিলিতভাবে ১৫-১৬ জানুয়ারি কাউন্সিলের প্রস্তাব দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন এ বিষয়েও তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়ার কোনো মনোভাব তিনি জানতে পারেননি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান মন্টু।  

ড. রেজা কিবরিয়া শারিরীকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে তার বক্তব্য না পাওয়ায় তার অংশের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোশতাক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাউন্সিল ১২ ডিসেম্বর হচ্ছে না। স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপর অংশের কাউন্সিলও স্থগিত হয়ে যাবে। দুই/তিনদিনের মধ্যে একটি ঘোষণা আসবে। দুই অংশেরই কাউন্সিল পরে সময় নিয়ে এক সঙ্গে হতে পারে।

সমঝোতার বিষয়ে আশা ব্যক্ত করে মোশতাক আহমেদ বলেন, আমরা সমঝোতার দিকেই যাচ্ছি। আট/১০ দিন আগে দু’পক্ষের দু’জন করে একটি বৈঠক হয়েছে। এখনও ছোটখাটো বৈঠক হচ্ছে। দুই/তিনদিনের মধ্যে চারজন করে আবার বৈঠক হবে।

আলাদাভাবে কাউন্সিল না করার বিষয়ে এরই মধ্যে দু’পক্ষ একমত পোষণ করেছে জানিয়ে মোশতাক আহমেদ বলেন, এতে রেজা কিবরিয়ারও মত আছে।

সমঝোতা হবে কি না জানতে চাইলে মন্টুর মতো মোশতাকও বলেন, আশা করি, সমঝোতা হবে। সেটা দুই/তিনদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
এমএইচ/এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।