নারায়ণগঞ্জ: শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক ও স্বাধীনতা পদকে (মরোণত্তর) ভূষিত জননেতা এ কে এম শামসুজ্জোহার ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন একাধারে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, গণ পরিষদের সদস্য ও স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয় সংসদ সদস্য।
মরহুম এ কে এম শামসুজ্জোহা এদেশের অন্যতম ঐহিত্যবাহী ওসমান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম জননেতা খান সাহেব ওসমান আলীও ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাবেক এমএনএ। ঐতিহ্যবাহী এ পরিবারের আদী নিবাস নারায়ণগঞ্জের ‘বায়তুল আমান ভবন’ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা হয়েছিল।
মহান ভাষা আন্দোলনের সময় এ বায়তুল আমান ভবনে তৎকালীন পাকিস্তানি পুলিশ প্রবেশ করে ওসমান পরিবারের সদস্যদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলনে এ বায়তুল আমান ভবন ও ওসমান পরিবারের ত্যাগের কথা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের শরণার্থী শিবিরে মরহুম শামসুজ্জোহা “ত্রাণবন্ধু” নামে পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত এ জননেতা সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে বিজয়ের বার্তা প্রচার করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। ওই দিন অপরাহ্নে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পাক সেনাদের হাতে আটক বঙ্গবন্ধু পরিবারকে মুক্ত করতে গিয়ে পাক সেনা কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হন এ কে এম শামসুজ্জোহা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের একটি সুধী সমাবেশে সেই ঘটনাটি নিজ মুখে বর্ণনা করেছিলেন এবং মহান জাতীয় সংসদেও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের ত্যাগ-তীতিক্ষার কথা স্মরণ করে বক্তব্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীকে গর্বিত করেছিলেন।
প্রয়াত শামসুজ্জোহার সহধর্মীনি ও রত্নাগর্ভা নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষা সৈনিক। তাঁর বড় ছেলে প্রয়াত জননেতা ও সাবেক এমপি নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে ১৯৭৫ এর ১৫আগস্ট নবপরিনীতা বধূকে রেখেই প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর শামসুজ্জোহাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি ও শহীদ জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী একই সেলে বন্দি ছিলেন। শামসুজ্জোহা ছিলেন ঐ কলঙ্কিত ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী। প্রয়াত শামসুজ্জোহার মেঝ ছেলে বিকেএমইএ’র সভাপতি ও সংসদ সদস্য (এমপি) এ কে এম সেলিম ওসমান ও ছোট ছেলে এ কে এম শামীম ওসমান এমপি একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় প্রয়াত শামসুজ্জোহাকে ২০১২ সালে স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) এ ভূষিত করা হয়।
এদিকে দিনটি উপলক্ষ্যে শনিবার মরহুমের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। পরিবারের পক্ষ থেকে সকাল ১১টায় বন্দরের মুছাপুরস্থ শামসুজ্জোহা বি এম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং বাদ আছর নারায়ণগঞ্জ মাসদাইর কবরস্থান জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
মরহুমের রাজনৈতিক সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্খীদের উক্ত মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলে অংশগ্রহণ করে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে মেঝ ছেলে সেলিম ওসমান এমপি ও ছোট ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামীম ওসমান এমপি সবাইকে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
আরআইএস