ঢাকা: অ্যাটর্নি জেনারেল পদটি সাংবিধানিক নয় জানিয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেছেন, শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর সব দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক পদ। বিএনপির বক্তব্য অসত্য এবং ভুল।
অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবিধানিক পদ দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলানিউজকে এ কথা বলেন সেলিম মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে সদস্য হিসেবে রাখা প্রসঙ্গে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, 'আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। প্রথমত হচ্ছে, এখানে অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিনকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে রাখা হয়নি। তাঁকে একজন আইনজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে, একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা সাংবিধানিক পদ না। '
অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা কেন সাংবিধানিক নয় সে ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব ও আইন বিশেষজ্ঞ ড. সেলিম বলেন, সাংবিধানকি পদ হচ্ছে সে সকল পদ, যেগুলোর মেয়াদ সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত, সংবিধান দ্বারা রক্ষিত। বিএনপি মনে করছে যে, অ্যাটর্নি জেনারেল পদের নাম যেহেতু সংবিধানে উল্লেখ আছে এবং সংবিধানে অ্যাটর্নি জেনারেল সংক্রান্ত একটা পরিচ্ছেদ আছে, সেজন্য অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা সাংবিধানিক। এটা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা।
আইন ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. সেলিম বলেন, পৃথিবীর সব দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক পদ। আমেরিকাতে অ্যাটর্নি জেনারেল হচ্ছেন মন্ত্রী। আমাদের এখানে যে রকম মিনিস্ট্রি অব ল। ওখানে হচ্ছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। এটার প্রধান হচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি হচ্ছেন একজন মন্ত্রী।
‘সারা বিশ্বে অ্যাটর্নি জেনারেলদের কাজ হচ্ছে সেই দেশের সরকারের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়ন করা। ’
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দীন সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী। তাকে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটিতে রাখা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তাকে রাখা হয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে গঠনতন্ত্র সেখানে বলা আছে, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক যে উপকমিটিগুলো হবে সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যরা থাকতে পারবেন। সেই হিসেবে আমাদের উপকমিটিতে দুই জন সদস্য রয়েছেন। একজন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অপর জন হলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তারা দুজনই সংসদীয় কমিটির সদস্য।
তিনি বলেন, বিএনপি বলছে যে, অ্যাটর্নি জেনারেল পদটি একটি সাংবিধানিক পদ। সাংবিধানিক পদের অধিকারী ব্যক্তিকে কোনো রাজনৈতিক দলের কমিটিতে রাখা যায় না। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল পদটি কোনো সাংবিধানিক পদ নয়। তাদের ধারণা হচ্ছে এই পদটি সংবিধানে উল্লেখ আছে, তাই এটি সাংবিধানিক পদ। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা। সংবিধানে কোনো পদের উল্লেখ থাকলেই সেটি সাংবিধানিক পদ হয় না।
‘সংবিধানে অনেক পদের উল্লেখ রয়েছে, যে পদগুলো সাংবিধানিক পদ নয়। যেমন আমাদের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সংক্রান্ত একটি অধ্যায় রয়েছে। সংবিধানে সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে উল্লেখ আছে, জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট পদসমূহের উল্লেখ রয়েছে। প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল সংক্রান্ত একটি অধ্যায় রয়েছে। এই সকল পদসমূহ সাংবিধানিক পদ নয়। সাংবিধানিক পদ বলতে সেই সকল পদ কে বুঝায়, যেই পদের মেয়াদকাল সংবিধান দ্বারা রক্ষিত। এই সকল পদধারী ব্যক্তিকে তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অপসারণ করা যায় না। যেমন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, কিছু কিছু কমিশনের সদস্য, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এই পদগুলো সাংবিধানিক পদ। ’
ড. সেলিম বলেন, আমাদের সংবিধানের বিধান অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। তার পদের কোনো সাংবিধানিক প্রোটেকশন নেই। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর মতো অ্যাটর্নি জেনারেল পদটি সাংবিধানিক পদ নয়।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপ কমিটিগুলোতে বিশেষজ্ঞ সদস্য থাকবে। এই ধরনের বিশেষজ্ঞ সদস্য দলের প্রাথমিক সদস্য নাও হতে পারেন। আমদের উপকমিটিতে অনেক সদস্য আছেন যারা দলের প্রাথমিক সদস্য নন, কিন্তু তারা বিশেষজ্ঞ সদস্য। অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দীন হচ্ছেন উপ কমিটির একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় সদস্য নন।
‘আমাদের আইন ও প্রথা অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন, নির্বাচন করতে পারেন, বিভিন্ন সভা সমিতিতে যোগদান করতে পারেন, এমনকি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। সারা বিশ্বেই এই পদটি রাজনৈতিক পদ। এটি কোনো নিরপেক্ষ পদ নয়। এটি কোনো বিচারিক পদ নয়। সংবিধান ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়ন করাই অ্যাটর্নি জেনারেলের কাজ। ’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, এটি দেখা প্রয়োজন, রাজনৈতিক দলের উপকমিটিতে থাকলে কোনো ধরনের কনফ্লিকট অব ইন্টারেস্ট থাকে কিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময়ই আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আমরা লক্ষ্য করছি, বিএনপি সংবিধান ও আইনের সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল পদ এবং আমাদের উপ কমিটিকে বিতর্কিত করতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
এমইউএম/এইচএডি/