ঢাকা: টেলিফোনে নিপুণ রায়ের গাড়ি পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার অডিও কথোপকথন বানোয়াট বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকায় হেফাজত আহুত হরতালের দিনে ২৮ মার্চ বিএনপি নেতা নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল জনৈক আরমানের সঙ্গে তার কথোপকথনের একটি বানোয়াট অডিও প্রচার করে, যা সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। নিপুণ রায় চৌধুরী একজন কর্মরত আইনজীবী, সক্রিয় মানবাধিকারকর্মী; সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রশ্নই উঠতে পারে না।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় ৮টি মামলায় কয়েক হাজার আসামি, অথচ চট্টগ্রামে (হাটহাজারীতে) কোনো মামলা করা হয়নি। কিন্তু বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশের হামলায় প্রায় ৫০ জন আহত এবং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাতসহ প্রায় ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে নারী ১৫ জন। ইতোমধ্যে ডা. শাহাদাতসহ প্রায় ১৫ জনকে রিমান্ড নেওয়া হয়েছে এবং ৫ নারীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হবিগঞ্জে ১টি মামলায় ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি এবং বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র গউসের ছেলে ব্যারিস্টার মঞ্জুরুল কিবরীয়া প্রীতমসহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ৭টি মামলায় ৩ হাজার ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুনসহ ১৬৬ জন বিএনপির বাকিরা অজ্ঞাতনামা। কিশোরগঞ্জে ২টি মামলায় আসামিদের মধ্যে ৬৪ জন বিএনপির, বাকি ২ হাজার ২৫০ জন অজ্ঞাতনামা।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করে। অথচ এই দাবি ছিলো তাদেরই। ২০১৪ সালে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে একতরফা পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করে। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে বিরোধী দলের ওপরে নজিরবিহীন অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, গুম ও খুনের মধ্য দিয়ে এবং বিরোধী দলের প্রধান নেতা খালেদা জিয়া, বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৩৫ লাখ সক্রিয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১ লাখ মিথ্যা, গায়েবি মামলা দায়ের করে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করা এবং ভিন্ন মতকে স্তব্ধ করার হীন চক্রান্ত করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতেই সব প্রতিষ্ঠানকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে নির্বাচনের কল্পিত ফলাফল ঘোষণা করেছে এবং পুনরায় ক্ষমতায় দখল করেছে। আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে একদলীয় শাসন, বাকশালের ন্যায় একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। মুক্তিযুদ্ধে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এই অবৈধ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছি। অবিলম্বে এ দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল বন্দী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় দুঃশাসন, দুর্নীতি ও গণতন্ত্র হত্যার দায় নিয়ে এই অবৈধ সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বর্তমান সরকারকে সরিয়ে জনগণের পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে দেশের সব গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলবার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ