ঢাকা: টানা লকডাউনে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষের দুর্বিসহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় এসব দরিদ্র মানুষের মধ্যে দ্রুত খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ৬ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন চলছে। তবে করোনা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি। সংক্রমণ কিছুটা করলেও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই বলেছে। টানা তিন ধরে ১০০ উপরে মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
রোববার (১৮ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
টানা এই লকডাউনে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ যারা প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তারা সংকটের মধ্যে পড়েছেন। লকডাউনের কারণে কাজ না থাকায় এই দিনমজুর, শ্রমজীবী মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে, তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।
১৪ দলের নেতারা জানান, লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ তাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। লকডাউনের কারণে কাজ না থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়েছে এবং আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব মানুষের সরকারিভাবে দ্রুত খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
১৪ দলের নেতারা শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষের তাৎক্ষণিক সহায়তার পাশাপাশি তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনারও দাবি জানাচ্ছেন। নেতারা বলেন, করোনা পরিস্থিতি গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। এই পরিস্থিতি সহসা নিয়ন্ত্রণে আসবে বা কবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যেমন বিধিনিষেধ জরুরি তেমনি শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষকে বাঁচাতে তাদের খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়াও জরুরি। এ কারণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা জরুরি বলে তারা মনে করেন।
এদিকে, সরকারের এই সহযোগিতা বিতরণে যাতে কোনো দুর্নীতি, অনিয়ম না হয় এবং অসহায় মানুষের কাছে যাতে যথাযথভাবে পৌঁছায় সেদিকে লক্ষ্য রাখারও দাবি জানিয়েছেন ১৪ দল নেতারা। এজন্য সরকারি আমলাদের পরিবর্তে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা বিতরণ এবং বিতরণ কাজ জোরদার মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ওই নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনের কারণে সরাসরি ১০ লাখের বেশি মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এরা দিন আনে দিন খায়। আমরা আগেই বলেছি লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হলে এদের খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। গত বছর করোনার সময় সরকার এদের জন্য ১৫০ কোটি টাকার সহযোগিতা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেটা যথাযথভাবে তাদের কাছে পৌঁছায়নি। সরকারের সহযোগিতা আমলাদের মাধ্যমে বিতরণ না করে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দিলে এই অসহায় মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমজীবী অতি দরিদ্রদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এর আগে সরকার দিয়েছিলো, সেটা ভালো উদ্যোগ ছিলো। এবারও সরকার বলেছে দেবে, কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন শুরু করা হয়নি। যারা প্রতি দিনের আয়ের ওপর চলে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। দ্রুত তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দিলে সেটা ভালো হয়।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হতদরিদ্র মানুষের দুর্বিসহ অবস্থা। এদের বাঁচাতে তাৎক্ষণিক খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতা তো জরুরি। এর পাশাপাশি সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। এই করোনা পরিস্থিতি কতোদিন চলবে সেটা কেউ বলতে পারে না। তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া মানুষকে বাঁবানো যাবে না। এরমধ্যে দুনীতি, অনিয়ম, দলীয়করণের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত সরকারকে এই পরিকল্পনা নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২১
এসকে/এনটি