ঢাকা: বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিবর্তনমূলক, অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসুলভ আচরণ ও বিভিন্নভাবে নাজেহাল করছেন।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করার পর থেকেই সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাণ তাদের মহান পেশার সম্মান সমুন্নত রাখতে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সারা বিশ্ব তাদের এ আত্মত্যাগকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সম্মানিত করছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যতীত সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে করোনার বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে ১৮৩ জন চিকিৎসক শহীদ হয়েছেন। সহস্রাধিক চিকিৎসকসহ অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে আছেন।
ড্যাব নেতারা বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিবর্তনমূলক, অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন ও বিভিন্নভাবে নাজেহাল করছেন। সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করার নিমিত্তে চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি সারাদেশেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অতি উৎসাহী ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে জরিমানা করা হয়েছে।
তারা বলেন, ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনার প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকারের উচিত ছিল জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠনপূর্বক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন করে সেই মোতাবেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে একনায়ক মানসিকতায় এককভাবে দলীয় বিবেচনায় মহামারি মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। ফলশ্রুতিতে শুরু থেকেই সমন্বয়হীন বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
ড্যাব নেতারা বলেন, করোনা মহামারি প্রতিরোধের যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ না হওয়ায় রাজধানীতে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ঢাকার করোনা পরিস্থিতিকে বারুদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। স্বাস্থমন্ত্রী বলেছেন, সারা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল ঘোষণা করলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায়ও চিকিৎসকরা সব স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় সাহসের সঙ্গে করোনা রোগীদের নিরলসভাবে সেবা দিচ্ছেন। বিগত বছর ঘোষিত প্রণোদনা বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেলেও স্বাস্থ্য বিভাগ এখনও অবহেলিত। সরকারের ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাবোধের বহিঃপ্রকাশ চিকিৎসকরা পাচ্ছেন না। উপরন্তু লকডাউনকালীন নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাস্তায় চিকিৎসকরা নাজেহাল হচ্ছেন, যা একান্তই অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য, নিবর্তনমূলক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২১
এমএইচ/আরবি