ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গণফোরামের দুই অংশ দুদিকে হাঁটছে

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
গণফোরামের দুই অংশ দুদিকে হাঁটছে

ঢাকা: গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন একাধিকবার চেষ্টা করেও এক করতে পারেননি দলের দুই অংশকে। বহু প্রচেষ্টার পরও দুই অংশ দুদিকে হাঁটছে বলে জানা গেছে।

একাংশের নেতৃত্বে আছেন ড. কামাল হোসেন, মোকাব্বির খান এমপি ও মোস্তাক আহমেদ। অপর অংশে আছেন মোস্তফা মহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৮ এপ্রিল মোস্তফা মহসীন মন্টু, আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার পর থেকে মূলত গণফোরামে অস্থিরতা শুরু। সেই সময় দলে নতুন যোগ দেওয়া ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়ায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি।

এরপর ধীরে ধীরে দুটি অংশে বিভক্ত হতে থাকে গণফোরাম। যার মূল অংশে ড. কামাল হোসেন থাকলেও তিনি উভয় অংশকে কোনোভাবেই এক করতে পারছেন না। এ অবস্থায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগ করেন ড. রেজা কিবরিয়া।

এ দিকে রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগের পর উভয় অংশের নেতারা ড. কামাল হোসেনের বাসায় একাধিক বৈঠক করেন। বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার থেকে ফিরে ঘোষিত দুই অংশ আলাদা কাউন্সিলও স্থগিত করে। ১৯ ডিসেম্বর উভয় অংশ ফের বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকের পর ড. কামাল হোসেন ঘোষণা দেন গণফোরামে কোনো সমস্যা নেই। শিগগিরই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি করা হবে।

এ অবস্থায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা ডাকেন মন্টু-সুব্রত-সাইয়িদের অংশ। তারা দাবি করেন, বর্ধিত সভায় ড. কামাল হোসেনের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। সেজন্য এই সভায় দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে সভাপতির পদ থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য মহসিন রশিদ বর্ধিত সভায় এই প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, দলের মধ্যে অনেক বিভাজন চলছে। এই বিভাজন বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে সভাপতির পদ থেকে ড. কামাল হোসেনকে বাদ দেওয়া উচিত। কমিটির সাবেক সদস্য সত্তার পাঠানও একই প্রস্তাব করেন। পরে জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা তাদের প্রস্তাব সমর্থন করেন। ওই সভা থেকেই ২৮-২৯ মে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

তাদের বর্ধিত সভার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন তখন বাংলানিউজকে বলেছিলেন, তারা যদি এক না হয় তাহলে আমাকে পাবে না। আমি এটা তাদের বলে দিয়েছি।

জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাউন্সিলের তারিখ আছে ২৮ ও ২৯ মে। ওই কাউন্সিল হবে কিনা সেটা পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এখনও একমাস সময় আছে। এর মধ্যে আমরা জেলা নেতাদের সাথে ভার্চ্যুয়াল সভা করবো। পরে সিদ্ধান্ত নেবো।

ড. কামাল হোসেনের অংশের সঙ্গে এক হয়ে কাউন্সিল হবে কিনা জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী বলেন, তাদের মধ্যে নানা রকমের সমস্যা আছে। তাদের সঙ্গে যারা ছিলেন অনেকে আমাদের দিকে চলে আসছেন। কিবরিয়া তো চলেই গেছেন।

ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কারা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা আছে তাও বুঝতে পারছি না। প্রথমত কিবরিয়া তাকে চালাতেন। এখন তিনি নিজেই থাকতে পারলেন না। আবার শুনছি তার কথায়ই কামাল সাহেব চলেন। আমরা তো কিবরিয়াকে পদত্যাগ করতে বলিনি। আমরা বলেছিলাম গঠনতন্ত্র মেনে দল পরিচালনা করেন এবং সভাগুলো রেগুলার করেন। সেগুলো না করে কামাল সাহেবের সঙ্গে কান কথায় তিনি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেন। এসব বিষয়ে ছেলেরা (ছাত্র ও যুব নেতারা) প্রতিবাদ করেছে, তাদের বহিষ্কার করেছে। আমরা বলেছিলাম, বহিষ্কার কেন করবেন, সভা ডাকতে বলেছে সভা ডাকেন। সেখান থেকেই মূলত সমস্যার শুরু।

তাহলে দুই অংশের এক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে সুব্রত চৌধুরী বলেন, এখন তাদের যে অবস্থা তারা কিছু করতে পারবে বলে মনে করি না। তাদের সেই অবস্থা নেই। জেলাগুলোও আমাদের সঙ্গে আছে।

ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ এপ্রিল কামাল সাহেবের জন্মদিনে ছাত্র ও যুবনেতাদের মাধ্যমে ফুল পাঠিয়েছিলাম। তাদের কাছে তিনি বলেছেন, অবস্থা ভালো হলে আবার সবার সঙ্গে বসবেন। আসলে দলের মধ্যে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা মনে রাখার মতোও ওনার অবস্থা নেই। ওনার কাছে মনে হয় সবকিছু নরমাল। কিন্তু এখানে যে অ্যাবনরমাল করে ফেলেছে, এটাও বোঝার অবস্থা নেই। দুর্ভাগ্য, ভালো মানুষটাকে নষ্ট করে দিলো।

ড. কামাল হোসেনের অংশের নেতা মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এখনও দুই অংশ দুদিকেই আছি।

কামাল সাহেব অনেক চেষ্টা করলেন তাও কিছু করতে পারলেন না? জবাবে মোস্তাক আহমেদ বলেন, কামাল সাহেব ওনাদের (মন্টু-সুব্রত) ব্যাপারে হতাশ। তিনিসহ আমাদের দিকের ৫ জন তাদের দিকের ৫ জন মিলে আপাতত চালানোর কথা ছিল। নামের সিরিয়াল নিয়ে তাদের দ্বিমত ছিল, দ্বিমত থাকলে তো তুলবে, তা না করে তারা আলাদা কাজ শুরু করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করেছেন, আমাদের জানাননি। এরপর একবার এসেছেন, আমাদের কারও সঙ্গে কথা না বলে কামাল হোসেনকে বলেছেন, আমাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, প্রেসক্লাবে একটা বর্ধিত সভা ডেকেছে, স্যার যেন থাকেন। স্যার বললেন, গুড, তিনি হল ভাড়াও দিলেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলাপ করেনি। যখন কামাল হোসেন শুনলেন, আমাদের সঙ্গে আলাপ হয়নি, তখন তিনি বলেন, এটা পিছিয়ে দেন। তারা ইয়েস বলে আবার ওই কাজই করলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে বেশিরভাগ অংশ কোন দিকে আছে জানতে চাইলে মোস্তাক আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় যে ফুল কমিটি ছিল ওইটার অধিকাংশ নেতা ও জেলা নেতারা সবই আমাদের সঙ্গে আছেন। ওদের দিকে শুধু দুই/তিন জন নাম করা নেতা আছেন—সুব্রত, আবু সাইয়িদ, মন্টু ভাই। এর মধ্যে মন্টু ভাই ৭ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি যদি সংগঠনে সক্রিয় থাকতেন তাহলে গত কাউন্সিল তার কন্ট্রোলেই থাকতো। তিনি কাউন্সিলেই অনুপস্থিত ছিলেন। তার কথা এখন ঢাকা ছাড়া কেউ শোনে না।

ওই অংশ মে মাসের ২৮-২৯ তারিখ কাউন্সিল ডেকেছে আপনারা কী করবেন? জবাবে মোস্তাক বলেন, ওগুলো কিছুই করবে না, দেখেন।

আপনারা কাউন্সিল করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্সিল করবো, বাস্তবতা হলো—এই মহামারির মধ্যে আমরা কি পারবো? ডাকলে তো আসবে না। আর অনলাইনে বাংলাদেশের সব জেলা কমিটি রেসপন্স করতে পারবে না। এটা হলো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিছু লোক যোগ দিতে পারে। কিন্তু তাতে কাউন্সিল হয় না। কাউন্সিল হলো কেন্দ্রীয় কমিটি করতে হবে।

রেজা কিবরিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাক আহমেদ বলেন, তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। তিনি দ্বিমত করে রিজাইন করেননি। কামাল হোসেনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই রিজাইন করেছেন। তিনি বাইরে থেকে আমাদের সাপোর্ট দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।