টাঙ্গাইল: আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে তপন রবিদাস নামক এক ব্যক্তিকে রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলে আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (০৭ জুন) টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে শহরে।
গত ১ জুন শহরের বেবীস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা তপন রবিদাস প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, আগের দিন (৩১ মে) সকালে শহরের কলেজপাড়া এলাকায় আমানুর তার বুকে রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তপন টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আমানুর রহমান খান রানা তার বক্তব্য জানাতে সোমবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি প্রেসক্লাবের সামনে তার অনুসারীদের নিয়ে মহড়া দেওয়ারও উদ্যোগ নেন।
এদিকে প্রয়াত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এবং প্রেসক্লাবের সামনে ফারুক হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
আমানুরকে সকাল ১১টায় এবং নাহার আহমেদকে বেলা সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের সময় দেয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রেসক্লাব ও আশপাশের এলাকায় লোকজন সমবেত হতে বাধা দেয় পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে আমানুর প্রায় ২০ জন সমর্থক নিয়ে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন শেষ করে চলে যাওয়ার পর নাহার আহমেদ তার সমর্থিত ১০/১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আমানুর রহমান খান রানা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে তাকে ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ মামলায় তাকে দীর্ঘ ৩৪ মাস ২১ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নতুন হাইব্রিডরা তার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি শুরু করেছে। তপন রবিদাসকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে তপন রবিদাস নামে কোনো ছেলেকে আমি চিনি না, কখনো দেখিওনি। এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো নাটক এবং এর কুশিলবরা পর্দার আড়ালে রয়েছে।
তিনি এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, তার ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনি এবং টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরনের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির অভিযোগ আনেন।
রানা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আমি আস্থাশীল। আমি আগেও তার প্রতি আস্থাশীল ছিলাম, আছি এবং চিরকাল থাকব। রানার দাবি টাঙ্গাইলের তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গেই আছেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মির্জা আনোয়ার হোসেন বাবুল, ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সির সাইফুল ইসলাম ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন জামান, আনেহলা ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার মো. শাহজাহান, দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন তালুকদার, লোকেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি আব্বাস আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ রাজীব প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন শেষ করে আমানুর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
অপরদিকে একই স্থানে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহার আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে হত্যার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলে ঘোর অমানিশা দেখা দেয়। টাঙ্গাইলের সব শ্রেণির মানুষের রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমে ফারুক আহমেদের হত্যাকারী খান পরিবারের লোকজন আইনের হাতে ধরা পড়েন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও বিচার না হওয়ায় সেই সন্ত্রাসী ও খুনিদের মদদে পুনরায় টাঙ্গাইল অশান্তির নগরীতে রূপ নিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন তপন রবিদাসকে আমানুর রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। খান পরিবারের বড় ছেলে আমানুর রহমান খান রানার নেতৃত্বে টাঙ্গাইলে আবার অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়েছে। তিনি রানার জামিন বাতিল করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিন, শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিকদার মানিক, ফারুক আহমেদের মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুন ও জামাতা ইমরান হোসেন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে এই হত্যার সঙ্গে তৎকালিন এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার অপর তিন ভাইয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এ ঘটনার পর তারা আত্মগোপন করেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই বছর সেপ্টেম্বরে মামলার প্রধান আসামি আমানুর রহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় তিন বছর হাজতে থাকার পর তিনি জামিন পান। তার ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ছয় বছর পলাতক থাকার পর গত ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি জেল হাজতে রয়েছেন। অপর দুই ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা পলাতক রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২১
আরএ