ঢাকা: সরকারের কাছ থেকে বিনা সুদের ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনা সরকারি কর্মকর্তাদের ৬৫ শতাংশই সেইসব গাড়ি উবারে ভাড়ায় দেন বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনে এসব কর্মকর্তা সরকারি পুলের আরও একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী দুর্নীতিকে উৎসাহিত করার অনেক সুযোগ রেখেছেন বলে উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা সুদে সরকারের থেকে লোন নিচ্ছেন গাড়ি কেনার জন্য। প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা নেন সেই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। কিন্তু তাদের ৬৫ শতাংশই সেই গাড়ি উবারে ভাড়ায় খাটান আর সরকারি পুল থেকে আরও এক বা দুটি গাড়ি নেন। অর্থমন্ত্রীর টাকার দরকার হয়, এ জন্য তিনি ট্যাক্স (কর) বসান। কিন্তু সেই কর এমনভাবে বসিয়েছেন যেখানে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে, যার মধ্যে দিয়ে দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে তার ব্যক্তিগত পেশা ও শ্রেণির প্রতিফলন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, বাজেট হওয়া উচিত নাগরিকদের কারণে, বাজেট নাগরিকদের ‘এফেক্ট’ করে। কিন্তু এই বাজেট হয়েছে অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পেশা ও শ্রেণির বাজেট। এখনও ব্রিটিশ আমলের মতো বাজেট পেশ করা হয় যেখানে বাজেট ঘোষণার আগে কেউ কিছু জানে না। অথচ এটা এমন হতে পারতো যে, বাজেট সংসদে উত্থাপন করার আগে সেটা প্রকাশ করা হবে। মানুষজন পথেঘাটে, পাড়া-মহল্লায় সেটা নিয়ে আলোচনা করবে। সবার থেকে প্রতিক্রিয়া নিয়ে তারপর একটি বাজেট ঘোষণা করা হবে।
‘সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টিতে’ শিরোনামে বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বাজেটকে তিনটি দিক থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে; কোথায় কেমন বরাদ্দ দেওয়া হলো, কোন কাজগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হলো এবং বাস্তবতার প্রতিফলন। এবারের বাজেটে এই তিনটি জিনিস একে অপরের সাথে অসামঞ্জস্য। যেমন দেশের জিডিপির ৫৫ শতাংশই যোগান দেয় অভ্যন্তরীণ সেবা খাত। অর্থাৎ এই যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা উদ্যোগগুলো। কিন্তু সেই খাতেই বরাদ্দ কম। বাংলাদেশের মানুষদের বলা হয় ‘রিজিলিয়েন্ট’ অর্থাৎ যারা আঘাত সহ্য করতে পারে এবং ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বাজেটের বাস্তবতা যদি এমন হয় যে, এই রিজিলিয়েন্ট জনগণকে না দিয়ে বরাদ্দ হচ্ছে অন্য খাতে, সেটি কাঙ্ক্ষিত বাজেট নয়। বার্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম বা এডিপি পর্যালোচনা করলে দেখবেন যে, যাদের বরাদ্দের হার ঊর্ধ্বমুখী তাদের এডিপি বাস্তবায়নের হার নিম্নমুখী।
থোক বরাদ্দ হিসেবে রাখা ১০ হাজার কোটি টাকার হিসেব প্রকাশ করারও দাবি হাসান এই অর্থনীতিবিদ। হোসেন জিল্লুর বলেন, ২০২০ সালে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটা কোথায় খরচ করা হয়েছে তার হিসাব জানা দরকার। সরকারের নিজের জন্যই সেই হিসাব দরকার। একই সাথে এবারের বাজেটেও যে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে সেটি করোনা টিকা, নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং কমিউনিটি ক্লিনিক খাতে ব্যয় করা উচিত। একই সাথে ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথ–এটিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সরকারের কাছে বরাদ্দের আহবান জানাচ্ছি।
অর্থনীতিবিদ ডা রেজা কিবরিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২১/আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা
এসএইচএস/এমজেএফ