যশোর: করোনা মানুষের জীবনে বহুবিধ পরিবর্তন এনেছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজনীতিকদের মধ্যেও।
সীমান্ত জেলা যশোরে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে বিপন্ন-অসহায় মানুষের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ‘দ্বন্দ্ব’ ভুলে স্বপ্রণোদিত হয়ে বৈঠক করেছেন পাঁচ সংসদ সদস্য। এছাড়াও জেলার আরেকজন সংসদ সদস্য বিদেশে অবস্থান করলেও এই বৈঠকের ব্যাপারে তিনি অবগত থেকে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
যশোর জেলায় করোনা মহামারির এই সংকটকালে ছয় এমপির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরেছে স্বস্তি, তৈরি হয়েছে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ। যদিও পুরনো অভিজ্ঞতায় এই ‘ঐক্য’ কতদিন টিকবে তা নিয়ে নানা কথা হলেও বেশিরভাগ মানুষ দেখছেন ভালোভাবে। আশা করছেন, করোনা মহামারিতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে জনসেবা করা ছাড়াও আগামীতে জেলার উন্নয়ন ও আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে চমক সৃষ্টি করবেন ছয় এমপি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার টানা তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার পরিচালনা করছে। ২০০৮ সাল থেকে টানা ১৩ বছর রাষ্ট্র পরিচালনাকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রুমুক্ত প্রথম জেলা যশোরকে অনন্য গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রতিবারই এ জেলা থেকে হুইপ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন কেউ না কেউ। আওয়ামী লীগের মতো প্রধান রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন এ জেলারই নেতা পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। সবশেষ এ জেলারই সন্তান লেখক ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে নানান কারণে জেলার ছয়জন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধের শূন্যতা থেকেই গেছে। মাঝে-মধ্যে এই সংকট রূপ নিয়েছে বাকবিতণ্ডা-সংঘর্ষের কিংবা হত্যাকাণ্ডের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কিংবা খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কখনো ‘বুঝ মানিয়ে’ আবার কখনো ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ উচ্চারণ করে বসিয়েছেন এক টেবিলে। তবে, কয়েক মাস যেতেই ফিরে এসেছে আগের ‘দা-কুড়াল’ সম্পর্কের অবস্থায়।
নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন পিছিয়েছে। একই সঙ্গে দলের মধ্যে বেড়েছে হাইব্রিড নেতা। কোনো কোনো উপজেলায় নিজেদের দল ভারী করতে ‘আশ্রয় দেওয়া’ বিএনপি-জামায়াতের লোকজন খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছে। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মৌন সমর্থন দিয়ে ডোবানো হয়েছে অসংখ্য নৌকার মাঝিকে।
এবার আর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চাপ কিংবা হুঁশিয়ারিতে নয়, যশোরে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকতে জেলার একজন প্রতিমন্ত্রী ও পাঁচ এমপি স্বপ্রণোদিত হয়েই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। পুরাতন সব ভেদাভেদ ভুলে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) রাতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য স্বপন কুমার ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে তার ঢাকার সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায়, যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন। এসময় যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদ লন্ডনে অবস্থানে করায় তিনি স্ব-শরীরে অবস্থান করতে না পারলেও সব বিষয়ে অবগত থেকে সিদ্ধান্তে ঐক্যমত পোষণ করেন।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিমন্ত্রীসহ আমরা জেলার ছয়জন এমপি করোনা মহামারিতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের পাশে থাকবো।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে আগে তো এমপিরা যে যার মতো করে চলতেন, কোনো সমন্বয় ছিল না। তবে, আমাদের এই ঐক্যবদ্ধতা দেরিতে হলেও এখন থেকে জেলার প্রত্যেকটি সেক্টরের উন্নয়নে আমরা একত্রিতভাবে জোরালো ভূমিকা রাখবো। এছাড়াও সামনে সংসদ নির্বাচন আসছে। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে সব অপশক্তির জবাব দিতে আমরা এখন থেকেই দলকে সুসংগঠিত করবো।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার বাংলানিউজকে বলেন, আমারা সবাই ঐক্যবদ্ধ, এখন থেকে কারো-মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না। আমরা সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়নে নৌকা প্রতীকের ভোটে নির্বাচিত এমপি।
ঐক্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যা দেখছেন, শুনছেন এটাই সত্য, এটা বাস্তবতার সঙ্গে মিলবে।
প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আমি কোনো গ্রুপিং-লবিংয়ে বিশ্বাসী নই। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে শান্তির পথে-উন্নয়নের সঙ্গে আছি, আগামীতেও থাকবো। আশা করি, জেলার সব এমপি ও দলীয় নেতা নিজেদের মধ্যে বিভেদ ছড়াবেন না। এখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের যার যার অবস্থান থেকে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
ইউজি/এএ