ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

১৪ দলীয় জোট নিয়ে শরিকদের প্রশ্ন

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
১৪ দলীয় জোট নিয়ে শরিকদের প্রশ্ন

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল কার্যকর আছে, না কি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে। আর এই পরিস্থিতির জন্য জোটের প্রধান আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছেন জোট শরিকদের অনেকে।

১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ, যে প্রেক্ষাপটে ১৪ দল গঠিত হয়েছিলো, সেই বাস্তবতা এখনও বিদ্যমান থাকলেও এ ক্ষেত্রে জোটের কোনো ভূমিকা নেই। গত ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে দলটির দূরত্ব বেড়ে যায়। বিভিন্ন সংকটের সময় কোনো কোনো বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে মাঝে মধ্যে জোটের সঙ্গে পরামর্শ করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ বা সরকার এ ধরনের কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। দীর্ঘদিন ১৪ দলের প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও জোটের শরিক নেতাদের কোনো বৈঠক হয় না। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় দেড় বছর ধরে এটা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ১৪ দলের এই পরিস্থিতি অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে। তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতারা বৈঠকের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেও সেটা সম্ভব হয়নি বলে জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ।

১৪ দলের নেতাদের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরাসরি বৈঠক করা সম্ভব নয়, কিন্তু ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতবিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে করোনার এই কঠিন সময়ে করণীয় সম্পর্কে জোট শরিকদের কোনো না কোনোভাবে মতামত নেওয়া বা পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তা ছিলো, সেটা করা হয়নি। মাঝে দিবসভিত্তিক দুই একটি ভার্চ্যুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয়। তবে নীতিগত বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এটা শুধু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর নয়, এর অনেক আগে থেকেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে ১৪ দল অকার্যকর বলেও জোট শরিকদের অনেকেই অভিযোগ করেন।

১৪ দলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, জোটের কোনো কার্যক্রম নেই, কার্যকরও নেই। এটা আওয়ামী লীগের কারণেই হয়েছে। কোনো বিষয়ে ১৪ দলের সঙ্গে কোনো পরামর্শও করা হয় না, মতামতও নেওয়া হয় না। এক সময় মাঝে মধ্যে কোনো কোনো বিষয়ে জোটে পরামর্শ করা হলেও দীর্ঘ দিন ধরেই সেটা আর দেখি না।

এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে এই মুহূর্তে কার্যক্রম চালানোর পরিস্থিতি নেই, তবে নীতিগত বিভিন্ন বিষয়ে মতামত, পরামর্শ নানাভাবেই হতে পারে, জুমে (ভার্চ্যুয়াল) হতে পারে কিন্তু সেটা নেই। কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ১৪ দলের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। প্রথম দিকে যে আলোচনার চর্চাটা ছিলো সেটা কিন্তু এখন হয় না। যে নীতি আদর্শ ও বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে জোট গঠন হয়েছিলো, সেই বাস্তবতা এখনও রয়েছে। তাই বাস্তবতা উপলব্ধি করে ১৪ দলকে সক্রিয় করা উচিত।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, করোনার এই সময় মানুষের জন্য ১৪ দলের পক্ষ থেকে কিছু করা সম্ভব হয়নি। এই সংকট উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে জোটে কোনো পরামর্শও হয়নি। যে রাজনৈতিক সংকট ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ১৪ দল গড়ে উঠেছিলো, তা এখনও বিদ্যমান। ১৪ দল এভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলে ষড়যন্ত্রের সেই শক্তি সুযোগ পেয়ে যাবে। ১৪ দলকে কার্যকর করা আওয়ামী লীগের ওপরই নির্ভর করে।  

তবে করোনার কারণে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৪ দলের কার্যক্রমও বন্ধ বলে জানান জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৪ দলও আবার সক্রিয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

হাসানুল হক ইনু বলেন, করোনার কারণে সরকার, প্রশাসনের কার্যক্রম ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নেই। ১৪ দল আছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও কার্যক্রম শুরু হবে।

জাতীয় কোনো সংকট মোকাবিলায় করণীয় প্রসঙ্গে জোটোর কোনো মতামত নেওয়া হয় না, চলমান করোনা সংকট মোকাবিলায়ও ১৪ দলের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ইনু বলেন, এসব সংকটে করণীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগেরও কোনো মতামত নেওয়া হয় না, ১৪ দলেরও কোনো মতামত নেওয়া হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।