বরিশাল: বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা, পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৪টায় বরিশাল নগরের কালিবাড়ি রোডে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন সেরনিয়াবাত ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বুধবার রাতের ঘটনার বিবরণের লিখিত বক্তব্য পাঠকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, রুটিন কাজের ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদে (থানা কাউন্সিল) ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনও’র বাধার মুখে পড়েন। ইউএনও দম্ভোক্তি করে অশোভন আচরণ ও সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। পরবর্তীতে ইউএনও নিজে ও তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা সিটি করপোরেশনের স্টাফ, মেয়র, প্যানেল মেয়রসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর শটগানের গুলি ছোড়েন।
প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, গত রাতের পুরো ঘটনায় এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৬০ জনের অধিক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং ৫০ এর অধিক পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, গত রাতের উদ্ভূত পরিস্থিতির ব্যাখ্যা ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আজ দুপুর ১২টায় সেরনিয়াবাত ভবনে একটি সভার আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মেয়রের নিরাপত্তার অজুহাতে সেরনিয়াবাত ভবন ঘিরে রাখে। সেই সময় যে নেতাকর্মীরা ওই বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে তাদের গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর কারণ বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ যাতে সুসংগঠিত হতে না পারে। এখনও নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। শোকাবহ আগস্টে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের এমন আচরণ সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করাসহ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত নেতাকর্মীদের প্রতি চরম আঘাত। শোকের মাসে শান্তির নগরীকে কেন অশান্ত করে তোলা হলো সেটাই আমাদের প্রশ্ন।
প্যানেল মেয়র বলেন, আমরা বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ মনে করি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেয়রের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে, ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা জননেত্রী শেখ হাসিনার সব সফল অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্তে লিপ্ত আছেন। আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, গত রাতের ঘটনায় মনে হয়েছে বরিশালকে অশান্ত করে গড়ে তোলা এবং এখানে শান্তি বিঘ্নিত করে বরিশালের রাজনীতিকে কুলষিত করার একটি অপচেষ্টা। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নয়, শোকের মাসের নয়—এমন ব্যানার অপসারণ করা হচ্ছিল, সেখানে ইউএনও সাহেব বাধা দিয়েছেন বুঝলাম। কিন্তু এমন কি ঘটনা ঘটেছে যে গুলি চালাতে হবে? এই শোকের মাসে এভাবে মানুষের ওপর সরাসরি গুলি করাকে আমি মনে করি মানবতাবিরোধী কাজ। পুরো ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করা উচিত।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন কৌশল থাকতেও সরাসরি গুলি নিক্ষেপ করা হলো। বলা হয়েছে, ইউএনও এর বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি সেখানে ছিলাম, তার ঘরের একটি জানালার কাচও ভাঙেনি।
সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক বলেন, দিনের বেলা যানবাহনের চাপের কারণে পরিচ্ছন্ন অভিযান রাতের বেলা পরিচালনা করা হয়। এটা আগে থেকেই হয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল মহানগর ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
এমএস/এমজেএফ